Friday, February 21, 2014

ভন্ড ভাষাপ্রেমিকদের হাত থেকে ভাষা আন্দোলনের পতাকা কেড়ে নিতে হবে


আজ মহান ২১শে ফেব্রুয়ারী, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশের(তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) মানুষ তথা বাঙালি জাতি নিজেদের ভাষার স্বীকৃতি ও অধিকারের দাবীতে ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিল একটি দীর্ঘস্থায়ী নজিরবিহীন রক্তস্নাত আন্দোলন। সে আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো এই ২১শে ফেব্রুয়ারী। সে আন্দোলন শুধু বাংলা ভাষার অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রেই সফল হয় নি, সেই আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রও, বাংলাদেশ। রাষ্ট্রসঙ্ঘ সেই অভূতপূর্ব ভাষা আন্দোলনকে স্মরণীয় করে রাখতে ও তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেব উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্বভাবতঃই আমাদের, বাঙালিদের, একটি বিশেষ অহঙ্কারের দিন হলো এই ২১শে ফেব্রুয়ারী তারিখটি
পশ্চিমবঙ্গে এ দিনটি আর পাঁচটা দিনের মতোই একটা সাধারণ দিন। অধিকাংশ মানুষ এখানকার জানেই না আজ বিশ্ব এ দিনটি উদযাপন করছে মাতৃভাষা দিবস রূপে। জানে না পাশের দেশে বসবাসকারী স্বজাতির মানুষের রক্তক্ষয়ী ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের কথা। যারা জানে তাদের একটা অংশ হয়তো নম নম করে দিনটি উদযাপন করে, কিন্তু সে আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে চর্চা বিশেষ একটা করে না। বাঙলাদেশের মানুষের মত না হলেও আসামের বাঙালিরাও মাতৃভাষার দাবীতে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো তাতেও প্রচুর রক্ত ঝড়েছিলো, অনেকেই শহীদত্ব বরণ করেছিলো। সে আন্দোলনের কথা, সেই শহীদদের কথাও আমরা ভুলে বসে আছি। পশ্চিম বঙ্গের মানুষ হিসেবে আমাকে এই নির্লিপ্ততা, উপেক্ষা ও অজ্ঞতা ভীষণ আহত করে, লজ্জিতও করে।
এই দিনটি বেশ সাড়ম্বরে উদযাপন করে বাংলাদেশের মানুষ। শুধু দিনটি নয়, গোটা মাসভোরই তারা উদযাপন করে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের সম্মান জানাতে ও বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে। আজও গোটা বাংলাদেশ উৎসবের মেজাজে দিনটি উদযাপন করছে।   
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এই দিনটিতে নির্বিকার বসে থাকা আমাকে ভাবায়, বিষ্মিত করে ও লজ্জিত করে ঠিকই, তাই বলে বাংলাদেশের মানুষের সাড়ম্বরে এই দিনটি বা গোটা মাসটি উদযাপন  আমাকে যারপরনাই আপ্লুত, অভিভূত, উচ্ছ্বসিত ও গর্বিত করে এমন নয়। তাদের উৎসবমুখর এই উদযাপনও আমার হৃদয়কে ভীষণভাবে যে ছোঁয় তা কিন্তু নয়, বরং মনের ভিতর উল্টো প্রতিক্রিয়াও হয়, কষ্টও হয়। কারণ, খুব স্পষ্টই দেখতে পাই গোটা দেশজুড়ে এই উদযাপনে যারা মেকি বাঙালি, মেকি ভাষাপ্রেমিক ও মেকি দেশপ্রেমিক তাদেরই নিরঙ্কুশ প্রাধান্য, আধিপত্য ও কর্তৃত্ব। যারা অমর একুশে ফেব্রুয়ারী ও ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য অর্জন ও ঐতিহ্যকে  মূলধন করে কেবলই ক্ষমতা দখল-বেদখলের রাজনীতি করছে, যারা ঐ রাজনীতিকদের পদলেহনকারী আর ক্ষমতার প্রসাদ ও উচ্ছ্বষ্টভোগী বুদ্ধিজীবী  তাদেরই  দাপট সর্বত্র। এমনকি যারা ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রু তারাও হাতে ফুল ও মালা এবং কন্ঠে একুশের অমর সঙ্গীত নিয়ে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর যারা আসল বাঙালি, যারা বাহান্নর ভাষা আন্দোলন তথা ২১শে ফেব্রুয়ারীর চেতনা ও আদর্শ আজও বুকে ধারণ করে, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আদর্শ ও স্বপ্ন এখনও লালন পালন করে হৃদয়ের মাঝে মণি-মাণিক্যের মতো, যারা অন্তরের অন্তস্থল থেকে  নিঙরে নেওয়া শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ফুল মালা পতাকা ও গানের ডালি নিয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবার জন্যে অপেক্ষা করে থাকে সাড়া বছর এই দিনটির জন্যে, তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় শহীদ মিনারের দীর্ঘ লাইনের একেবারে পিছনে অবাঞ্ছিত ও অপাংক্তেয়র মতো। যারা বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের চিরশত্রু, যারা মানবতার শত্রু, যারা ধর্মের দোহাই, আল্লাহর দোহাই ও মুহাম্মদের দোহাই দিয়ে প্রতিদিন অমুসলিমদের হত্যা করছে, লুঠ করছে, ধর্ষণ করছে, যাদের ভাষা দিবস উদযাপন করার কোনো অধিকারই নেই তারাই উদযাপন করছে অথচ কেউ কেউ আছে যারা বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের মান ও গৌরব বৃদ্ধি করেছে, করে যাচ্ছে তাদের এই দিনটিকে উদযাপন করার, শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে তাদের শ্রদ্ধা জানাবার, একুশের অমর সঙ্গীতে কণ্ঠ মেলাবার, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করার অধিকার নেই, তারা আজ বিদেশ বিভুঁইয়ে নির্বাসিত। এমনতর উদযাপন কার ভালো লাগে জানি না! এমন ভন্ড উদযাপন আর যার ভালো লাগে লাগুক আমার লাগে না।  
বাংলাদেশের আজকের খবরের কাগজগুলোর পাতায় চোখ রেখে যখন দেখি বিএনপির নেত্রী এই দিনটিতে বাণী দিচ্ছে, বড়ো বড়ো ভাষণ দিচ্ছে ইসলামি মৌলবাদী দলগুলির নেতারা এবং তারা লাইনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষা দিবস উদযাপন করছে  শহীদ মিনারে ফুল মালা দিয়ে তখন ঘৃণায় গা রি রি করে। যখন পড়ি ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম চত্বরে গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়েছে ... দেশের সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা অন্যান্য উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হচ্ছে বিদেশে অবস্থিত মিশনসমূহেও শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথভাবে উদযাপিত হচ্ছে এ রকম সংবাদ তখন অসহ্য লাগে, হৃদয়ের ভিতর রক্তক্ষরণ হয় আর তারই যন্ত্রণায় একলা একলা দগ্ধ হই। ইসলামপন্থীরা বাংলা ভাষাকে কাফেরের ভাষা বলেছিলো,  পাকবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে ভাষা আন্দোলনের সৈনিকদের হত্যা করেছিলো, অপমান করেছিল, আজো ওরা বিশ্বাস করে মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র হলো আরবী ও উর্দু ভাষা, আজো মনে করে বাংলা ভাষা হলো হিন্দুদের ভাষা, রবীন্দ্র নাথ হিন্দু কবি ও ‘সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ –এই  ‘জাতীয় সঙ্গীত’টি হিন্দুদের সঙ্গীতএই ধর্মান্ধরাই অবাধে উদযাপন করছে একুশে ফেব্রুয়ারী। 
বিএনপির সঙ্গে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা আন্দোলনের নেতাকর্মী আছে এ কথা ঠিক, কিন্তু সামগ্রিকভাবে বিএনপির কোনো অধিকার নেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কথা মুখে উচ্চারণ করার। কেননা এই দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত জিয়াউর রহমান কখনই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের চর। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যে পাকিস্তানের গুপ্তচর হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত গোপন খবর পাচারের কাজে নিযুক্ত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তার চরবৃত্তির কাজে তুষ্ট হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অন্যতম এক কর্তা কর্ণেল বেগ তখন তাকে যে চিঠিটি দিয়েছিলো সেটা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন সাংবাদিক বরহাদউদ্দিন। ১৯৭১-এর ২৯শে মে লেখা সেই চিঠিটির অংশ বিশেষ  এরূপ – ‘মেজর জিয়াউর রহমান, পাক আর্মি ঢাকা, তোমার কাজে আমরা সবাই খুশী। আমাদের অবশ্যই বলতে হবে তুমি ভালো কাজ করেছো। খুব শিগগিরিই তুমি নতুন *** পাবে। তোমার পরিবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ো না। তোমার স্ত্রী ও বাচ্চারা ভালো আছে। তোমাকে মেজর জলিল সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।’ জিয়াউর রহামান পাকিস্তানের চর ছিলো বলেই বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে একের পর পদক্ষেপ নিয়েছে একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যে, অপরদিকে মুক্তিযিদ্ধের চেতনাকে মুছে দেওয়ার জন্য। সেই পদক্ষেপগুলির মধ্যে রয়েছে মোস্তাক চক্রকে নিয়ে ১৯৭৫ –এর আগষ্টে মুজিবকে হত্যা করা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা ও যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া,  রাজাকার বাহিনীর মাষ্টার মাইন্ড গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনা, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্রু জামাতি ইসলামকে রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেওয়া, সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি মুছে দেওয়া  প্রভৃতি। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও সেই পথই অনুসরণ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। সেই খালেদা জিয়া দিচ্ছেন ভাষা আন্দোলনের শহীদদের উদ্দেশ্যে বাণী
বিএনপি ও তাদের দোসররা এখন একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন করে, অথচ যে মানুষটি বাংলাদেশের  মাতৃভাষাকে সারা বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশে একাই ছড়িয়ে দিয়েছেন তিনি পারছেন না আজ সকলের সঙ্গে কন্ঠ মিলিয়ে গাইতে – আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি? যাঁর বই সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় বিজাতীয় ভাষায় অনুদিত হয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে আন্তর্জাতিক স্তরে তাঁর আজ অধিকার নেই শহীদ মিনারে গিয়ে দাঁড়াবার।  দেশ যাঁকে তাড়িয়ে দিয়েছে সেই কবে,  কুড়ি  বছর আগে, তবু তাঁর লেখা কলামই আজো সে দেশে সর্বাধিক পঠিত লেখার তালিকার শীর্ষ ভাগে স্থান করে নেয়অথচ সেই লেখকই একুশের উদযাপনে ব্রাত্য, অবাঞ্ছিত ও নিষিদ্ধ। যে লেখক নারীর সমানাধিকার  এবং মানবাধিকারের পক্ষে আপোষহীন সংগ্রাম করে বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বের বিখ্যাত বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করে নিজেকে এবং তাঁর দেশকে সম্মানিত ও গৌরবান্বিত করেছেন তিনি আজ স্বদেশ থেকে চির নির্বাসিত। হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনের কথাই বলছি। বাংলাদেশের যাঁরা ভাষা সৈনিক আজো জীবিত আছেন তাঁদের পরে যাঁদের  ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় স্মরণ করার, উদযাপন করার ও শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করার নৈতিক অধিকার রয়েছে সর্বাধিক তাদের  মধ্যে একজন অগ্রগণ্য হচ্ছেন অবশ্যই তসলিমা নাসরিন। সেই তিনিই তাঁর প্রাণের ভাষায় কথা বলা থেকে, লেখা থেকে বঞ্চিত, তিনি নিষিদ্ধ তাঁর মাতৃভাষা থেকে, মাতৃভূমি থেকে  কেন নিষিদ্ধ? তিনি ‘লজ্জা’ গ্রন্থে হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলিম মৌলবাদীদের গণহত্যাকান্ডের বিবরণ লিখেছেন বলে, নারীর সমানাধিকারের কথা লিখেছেন বলে, পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লিখেছেন বলে, পুরুষতন্ত্রের ধ্বজাধারী ইসলাম সহ সকল ধর্মের বিরুদ্ধে লিখেছেন বলে, ভন্ড পীর ও ধর্মগুরুদের লোচ্চামির বিরুদ্ধে লিখেছেন বলে, হাসিনা ও খালেদার মুসলিম মৌলবাদী ও সন্ত্রাসীদের পদলেহনকারী নীতির বিরুদ্ধে লিখেছেন বলে, এ রকম আরো অনেক উচিত কথা লিখেছেন বলে তিনি নিষিদ্ধ, চির নির্বাসিত। চোর, ডাকাত, লুটেরা, লম্পট, জল্লাদ, ভন্ড, প্রতারক, সন্ত্রাসী – এরা সবাই থাকতে পারবে, ওদের সবার অধিকার আছে থাকার, কিন্তু তসলিমার নেই।  একজন মানুষ যে শুধু মানুষের অধিকারের পক্ষে লেখে, সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে লেখে, সকল হিংসার বিরুদ্ধে লেখে, ঘৃণার বিরুদ্ধে লেখে, সকল ভন্ডামির বিরুদ্ধে লেখে, তাকে শুধু লেখার জন্যে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার  মতো বড় অন্যায় আর কিছু হতে পারে নাসে লেখা কারও বিচারে যদি ভুলও হয়, অন্যায়ও  হয় তবু  তাকে তাড়ানোর মতো বড়ো অন্যায়, নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা আর কিছু হতে পারে না। এত বড়ো অন্যায় বহন করে চলেছে একটা দেশ কুড়ি বছর ধরে, আজও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নেই। কেন একজন লেখক নির্বাসনে থাকবে, কেন তার বই নিষিদ্ধ হবে, কেন তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হবে – এ আওয়াজ নেই। এত এত এই নেই সত্ত্বেও গোটা দেশ জুড়ে ভাষা আন্দোলন ও ভাষা দিবসের সাড়ম্বর উদযাপন হয়, ভাষা শহীদদের স্মরণ হয়।  এ কিসের উদযাপন, এ কিসের স্মরণ,  কাদের স্মরণ?   মহান ভাষা আন্দোলন, আর মহান একুশে ফেব্রুয়ারী আজ কার্যতঃ ভন্ড ভাষাপ্রেমিক ও ভন্ড দেশপ্রেমিকদের  হাতে বন্দি, নির্যাতিত ও কলঙ্কিত
আজ মহান এই একুশে ফেব্রুয়ারীতে তাই শুধু অনুষ্ঠান সর্বস্ব ভাষা দিবস উদযাপন নয়, বরং দিকে দিকে ঘরে বাইরে প্রতিবাদ হোক ভন্ড ভাষাপ্রেমিক ও ভন্ড দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে। ঐ ভন্ডদের হাত থেকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পতাকা কেড়ে নেওয়ার শপথ উচ্চারিত হোক। সেটাই হবে প্রকৃত উদযাপন ও প্রকৃত স্মরণ, তাতেই প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন করা হবে ভাষা শহীদদের প্রতি।
আমি আজ এই একুশে ফেব্রুয়ারী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত ও সফিউর সহ নাম না জানা বাংলাদেশ ও ভারতের আসামের কাছাড় জেলার ভাষা আন্দোলনের ভাষা শহীদদের। আমিও উদযাপন করছি একুশে ফেব্রুয়ারী আমার মতো করে, মেকি ও ভন্ড ভাষাপ্রেমিকদের  মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ভন্ডামির প্রতিবাদে এই নিবন্ধ লিখে। এ আমার শুধু নিছক একটা নিবন্ধই নয়, এ আমার হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধার্ঘ ভাষা-শহিদদের প্রতিও।
আমার এ নিবন্ধ আমি উৎসর্গ করছি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিনকে এবং বাংলাদশের গণজাগরণ মঞ্চের লক্ষ লক্ষ কর্মীদের যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও পতাকা ধারণ ও বহন করে চলেছে অকুতোভয়ে।     

Wednesday, February 19, 2014

আল্লহ অবাধ্য পত্নীকে পেটাবার নির্দেশ দিয়েছে পুরুষকে


‘পত্নীকে প্রহার করা পুরুষের আইন সম্মত অধিকার, ওতে কোনো দোষ নেই’ । না, এটা কোনো নাটক বা সিনেমার সংলাপ নয় । এটা আরব আমীর শাহীর সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায় । এই নিন্দার্হ ও ঘৃণার্হ রায়টি প্রদান করা হয়েছে একজন প্রহৃতা পত্নীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে । উক্ত মুসলিম নারী এবং তাঁর মেয়েকে তাঁর বীরপুরুষ পতিটি নির্মমভাবে প্রহার করেছিল । ঘটনাটি ঘটেছ সাম্প্রতিক কালেই (২০১০ সালে) । সর্বোচ্চ আদালত সেই রক্তাক্ত  পত্নীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাঁর পতির বিরুদ্ধে কারাদন্ডের আদেশ দেয় । সেই আদেশের মধ্যেই ঐ কুখ্যাত রায়টিও আছে । আদালত একদম স্পষ্ট ভাষায় জানায় যে স্ত্রী কন্যাকে প্রহার করার জন্যে অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় নি, কিংবা তার জন্যে কারাদন্ড দেওয়া হয় নি । কেননা পত্নী প্রহার করায় কোনো অন্যায় নেই, ওটাতো একজন মুসলমান পুরুষের ইসলামি  আইনসম্মত অধিকার । সে যেহেতু স্ত্রীকে প্রহার করার ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করেছে এবং তার ফলে শরীরে প্রহারের চিহ্ন ফুটে উঠেছে সেজন্যে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে ।
কোনো ইসলামি রাষ্ট্রের আদালত কিংবা  মুসলিম সমাজের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এরূপ কুৎসিত, অসভ্য ও অমানবিক রায় বা ফতোয়া যখন প্রদান করে তখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলিম সমাজে এর প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়সাধারণতঃ তাঁরা বিশ্বাস করতেই চান না যে ইসলাম ধর্মে এরূপ আইন আছে বা থাকতে পারেতাঁদেধারণা যে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ কোরানের অপবাখ্যা বা ভুল বাখ্যা করে এরূপ শরিয়তবিরুদ্ধ  রায় বা ফতোয়া প্রদান করে থাকেন যার ফলে ইসলামের ভাবমূর্তি অবিরাম ক্ষূণ্ণ হচ্ছে।  মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা ধরণের রায় বা ফতোয়াকে অনৈশ্লামিক ও মোল্লা-মুফতিদের মনগড়া ফতোয়া বলে বিবৃতি দেন । এ ধরণের বিবৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো ইসলামের তৈরী করা কৃত্রিম ভাবমূর্তি রক্ষা করাবলা বাহুল্য যে, এই রায়টিকেও তাঁরা অনৈশ্লামিক ও শরিয়তবিরুদ্ধ বলে বিবৃতি প্রদান করতে এক মূহুর্ত কালক্ষেপ করেন নি । তথাকথিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত  মুসলিম সমাজ যাই ভাবুন এবং মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যতই বিবৃতি প্রাদন করুন না কেন, এটাই নির্মম সত্য যে আরব আমীর শাহীর সর্বোচ্চ আদালতের ঐ রায়টি সম্পূর্ণ ইসলামসম্মতই ।  কারণ, ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ কোরানই পুরুষকে তার পত্নীকে পেটানোর অধিকার প্রদান করেছে অধিকার দিয়েছে বললে কম বলা হয়, বরং বলা ভালো যে কোরান পুরুষদের  নির্দেশ দিয়েছে তাদের পত্নীকে প্রহার করার জন্যে ।  হ্যাঁ, আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশ তাই, পত্নীর অবাধ্যতা আশঙ্কা করলে তাকে প্রহার করবে । দেখা যাক আল্লাহ ঠিক কী বলেছে,  -  “পুরুষগণ নারীর কর্তা; কারণ এককে অন্যের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আর তাহারাই তো সম্পদ ব্যয় করে; সতী নারী অনুগত, আল্লাহর হিফাযতে স্বামীর অবর্তমানে সংসার রক্ষা করে; যখন তাহাদের অবাধ্যতার ভয় কর; তখন উপদেশ দাও, শয্যা বর্জন কর, প্রহার কর; যদি অনুগত হয়ে যায় তবে বাহানা খোঁজ করিও না ” ( কোরান- ৪/৩৪) । এই বাণীতে অবশ্য উল্লেখ নেই যে এতদসত্ত্বেও স্ত্রী অনুগত না হলে তখন কী হবে ? তার উত্তর দিয়েছেন ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ । সেই উত্তরটি কী তা  উল্লেখ  করা হয়েছে  আর একটু পরে


এ যুগে কোনো অজুহাতেই পত্নীকে প্রহার করা কেবল অগ্রহণযোগ্যই নয়,  নিন্দাযোগ্য ও ধিক্কারযোগ্য অপরাধও বটে । এটা  আইনের চোখেও জামিন অযোগ্য ও দন্ডনীয় অপরাধ  । কোরানে এ রকম আরও অনেক অগণতান্ত্রিক, অমানবিক ও বর্বরোচিত আয়াত ( বাক্য/বাণী ) আছে । এ সব আয়াত সম্পর্কে অধিকাংশ মুসলিমরাই অজ্ঞ । এই অজ্ঞতা হেতু  সব কুৎসিত, জঘন্য ও অমানবিক ফতোয়ার জন্যে তাঁরা সব দোষ চাপিয়ে থাকেন উলামার( ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ) উপর । অবশ্য একদল উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম আছেন যাঁরা কোরান ও হাদিস সম্পর্কে যথেষ্টই বিজ্ঞ । তাঁরা সচেতনভাবে কোরানসিদ্ধ এই রায় বা ফতোয়াকে অনৈশ্লামিক বলে নস্যাত করেন যা মিথ্যাচার বৈ নয় এসব বুদ্ধিজীবীরা রায় বা ফতোয়াগুলি কেন ইসলাম সম্মত নয় তা বোঝাতে গিয়ে নিজেরাই মনগড়া বাখ্যা উপস্থাপিত করে থাকেন । আবার কখনো বলেন যে কোরানের আয়াতের মানে সব সময় আক্ষরিক অর্থে ধরা উচিত নয়, বুঝতে হবে তার ভিতরের আসল কথাটা । এ জাতীয় মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা একদম ভন্ড । এই ভন্ড বুদ্ধিজীবীদের বক্তব্য হলো, কোরানের ‘প্রহার কর’ শব্দবন্ধটিকে আক্ষরিক অর্থে নয়, বিচার করতে হবে প্রতিকী অর্থে । তাঁদের অভিমত হলো, আলেম সমাজ (উলামা) কোরানের অনেক আয়াতের  অন্তর্নিহিত অর্থ সঠিকভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্যে শরিয়তি আইনে অনেক ত্রুটি রয়েছে যা ইসলামের ভাবমূর্তিকে মলিন করছে  এবং ইসলাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা তৈরী করছে আরব আমীর শাহীর সংবিধান তথা শরিয়িত আইনের মধ্যে এই আইনটি সে রকমই একটি  মস্ত বড়ো ত্রুটি    
মুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ ‘পত্নীকে প্রহার’ করার অসভ্য নির্দেশটিকে প্রতিকী অর্থে দেখার দাবী করেছেন ।  কিন্তু এই  দাবীটি যে মোটেসঠিক বা যুক্তিগ্রাহ্য নয় তা আয়াতটি ভালোভাবে অধ্যয়ন করলেই বোঝা যায় । এই আয়াতে যেটা বিশেষভাবে  লক্ষ্যণীয় তা হলো এই যে, পত্নী অবাধ্য হলেই সঙ্গে সঙ্গে যে তাকে প্রহার করতে হবে এমন নির্দেশ প্রদান করা হয় নি ।  প্রহার করার পূর্বে তাকে বোঝানোর পরামর্শ  দেওয়া হয়েছে । তাতে কাজ না হলে তার শয্যা বর্জন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে,  তারপরেও অবাধ্য পত্নী অবাধ্য থাকলে সর্বশেষ উপায় হিসেবে তবে তাকে প্রহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে পত্নীকে প্রহার করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে পুরুষকে একেবারে আক্ষরিক অর্থেই, মোটেই প্রতিকী অর্থে নয় ।
এ রকম আইন মুসলিম সমাজের বুদ্ধিজীবীদের কাছে খুবই অস্বস্তিকর ও বিব্রতকর কারণ, আধুনিকে সমাজে এই আইনগুলি খুবই নিন্দার্হ, ঘৃণার্হ ও মানবাধিকারবিরোধী বলে চিহ্নিত তাঁরা  যেহেতু নিজেদের প্রগতিশীল বলে দাবী করেন তাই এই কুৎসিত আইন-কানুনগুলির পক্ষে দাঁড়াতে পারেন না। আবার মুসলমান সমাজে থাকতে হলে কোরানের সমালোচনাও করা যায় না । তাঁরা মুসলমানও থাকতে চান আবার প্রগতিশীলও সাজতে চান । কিন্তু তা একেবারেই সম্ভব নয়, তাই তাঁদের ভন্ডামির আশ্রয় নিতেই হয় । কিন্তু আলেম সমাজ ( ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ) ভন্ডামির আশ্রয় গ্রহণ করেন না মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের মতো, এবং এ রকম আইনের জন্যে তাঁরা লজ্জাবোধও করেন না । বরং কোরানের সমস্ত আইন ও নীতিমালাকে অভ্রান্ত ও চিরিন্তন বলে বিশ্বাস করেন শুধু বিশ্বাস করেন তাই নয়, একমাত্র মুসলমানরাই মহান স্রষ্টা আল্লাহর কোরানের আইন অনুসরণ করেন বলে তাঁরা রীতি মতো আত্মশ্লাঘা বোধও করেন । কেন আল্লাহর আইনগুলি অভ্রান্ত ও চিরিন্তন তার বাখ্যা ও যুক্তি তাঁরা প্রতিনিয়ত উপস্থাপন করে চলেছেন । তাঁদের যুক্তি যে অপযুক্তি সে কথা বলা বাহুল্য । বলা বাহুল্য যে  আলেম সমাজ পত্নীকে প্রহার করার ইসলামি বিধির পক্ষেও যুক্তি হাজির করেছেন তাঁদের যুক্তি হলো – পতির প্রতি পত্নীর আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই, কারণ আল্লাহ পুরুষকে নারীর কর্তা করে পাঠিয়েছেন এবং পুরুষ তথা পতিরাই তো নারীর (পত্নীর) ভরণ-পোষণ করে । সুতরাং পতির প্রতি পত্নীর অবাধ্যতা বা অনানুগত্য প্রদর্শন করার কোনো অধিকার নেই ।  তাই পত্নী অবাধ্য হলে তাকে বাধ্য করার জন্যে প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে এটাই তো স্বাভাবিক ।  সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজের সমস্ত ধর্মগুরুগণ এই প্রশ্নে সহমত যে অবাধ্য পত্নীকে প্রয়োজনে প্রহার করতে হবে ।  এ প্রসঙ্গে  পাকিস্তানের প্রখ্যাত ধর্মগুরু মাওলানা মুহাম্মদ আলী কী বলেছে তা শোনা যাক ।  তিনি  তাঁর বিখ্যাত পুস্তকে (The Religion of Islam: A Comprehensive Discussion of the Sources, Principles and Practices of Islam - Lahore, 1938 , p-652-653) লিখেছেন,  “It appears that confining (women) to the house is the first step, and it is when they repeat their evil deeds in the house, or do not submit to the authority of the husband and desert him, that permission is given to inflict corporal punishment, which is the last resort, and even if this last step does not make them mend their ways, matrimonial relations may be ended.”( ঘরের ভিতর নারীদের আটকে রাখা হচ্ছে প্রথম পদক্ষেপ, এবং এর পরেও যদি তারা তাদের মন্দ কাজগুলি অব্যাহত রাখে বা তাদের পতিদের কর্তৃত্বের প্রতি তাদের নত না করে ও পতিকে ছেড়ে চলে যায় তবে তাদের দৈহিক শাস্তি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে যেটা হলো সর্বশেষ ধাপ, এবং এমন কি এর পরেও এই শেষ পদক্ষেপও যদি তারা তাদের সংশোধন না করে তবে তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক রদ করা যেতে পারে ।) ( Vide: Women and the Koran, Anwar Hekmat, p-216)  কোরানের ৪/৩৪ নং আয়াতে এ বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ নেই যে প্রহৃত হওয়া সত্বেও যদি পত্নী পতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে তা হলে কী হবে ? তার উত্তরে মাওলানা মুহাম্মদ আলি তাঁর পুস্তকে লিখেছেন যে পতি তখন সেই অবাধ্য স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের ছেদ টেনে দেবে ।
স্ত্রীকে প্রহার করা নিয়ে উলামার মধ্যে অবশ্য মতভেদ আছে , সে মতভেদ  প্রহার করার মাত্রা ও ধরণ নিয়ে ।  এই প্রশ্নে বহু মত রয়েছে  তবে স্ত্রীকে প্রহারের মাত্রা ও ধরণ নিয়ে প্রধান মত হচ্ছে দুটি।  প্রথম মতটি হলো - কড়া বা কঠিন প্রহার নয়, হাল্কা ধরণের প্রহার করতে হবে   দ্বিতীয় মতটি হলো – কড়া প্রহার করতে হবে, হাল্কা বা আলতো প্রহার  নয় ।  যাঁরা প্রথম দলভুক্ত তাঁদের অভিমত হলো – হয় চড় বা থাপ্পড় মারবে ,  অথবা কিল বা ঘুষি মারবে ; তবে সে আঘাত যেন খুব জোরের সঙ্গে না হয় । এক্ষেত্রে যেটা লক্ষ্যণীয় তা হলো , কেবল হাত দিয়ে প্রহার করার কথা বলা হয়েছে । যাঁরা দ্বিতীয় দলভুক্ত অর্থাৎ যাঁরা কড়া প্রহারের পক্ষে তাঁরা প্রহার করার জন্যে লাঠি, রড ও চাবুক ব্যবহার করার বিধান প্রদান করেছেন । যাঁরা হাল্কাভাবে প্রহার করা সমীচীন বলেছেন তাঁরা কি ধরণের ‘হাল্কা প্রহার’ হবে সেটাও নির্দিষ্ট  করে দিয়েছেন ।  বলেছেন,  ‘স্ত্রীকে যতখুশী, যতক্ষণ খুশি প্রহার করা যাবে, কিন্তু প্রহারের ফলে যেন শরীরে কোনো চিহ্ন ফুটে না উঠে’ ।  আরও বলা হয়েছে যে, প্রহারের ফলে স্ত্রীর শরীরে যদি চিহ্ন ফুটে ওঠে তবে তা সীমা লঙ্ঘন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে এবং সেটা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ । আরব আমীর শাহীর শরিয়তি আইন বা সংবিধান বলা বাহুল্য যে এই মতটিকে অনুসরণ করেছে । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, পত্নীকে  কিল-ঘুষি কিংবা  লাঠি বা চাবুক নিয়ে প্রহার করার আদেশ আছে তার প্রমাণ কোরান ও হাদিসে পাওয়া যায় । ৩৮/৪৪ নং আয়াত বলছে, পত্নীকে গাছের ডাল দিয়ে প্রহার করো । স্বহস্তে শাখাপুঞ্জ গ্রহণ কর, পরে তদ্বারা আঘাত কর, শপথ ভঙ্গ করিও না ।" (অনুবাদ - গিরিশচন্দ্র সেন) আয়াতটি বা তথাকথিত ওহিটি আয়ুব নবীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে সে যেন তার পত্নীকে প্রহার করার যে শপথে করেছিলো সেটা যেন ভঙ্গ না করে । তফসিরের বর্ণনাটি হলো - "আয়ুবের পত্নীর নাম ছিলো রহিমা, আয়ুব যখন গুরুতর রোগে আক্রান্ত, সে তখন কার্যানুরোধে স্থানান্তরে গিয়েছিল, তথায় অনেক বিলম্ব করে, তাহাতে আয়ুব এক শত যষ্টির আঘাত করিবেন বলিয়া প্রতিজ্ঞা করেন । ঈশ্বরের প্রসাদে আরোগ্য লাভ করিলে পর তিনি সেই প্রতিজ্ঞা স্মরণ করিয়া প্রহারের ইচ্ছে করেন, তাহাতেই এই উক্তি হয় ।" (সূত্রঃ কুরআন শারীফ, গিরিশচন্দ্র সেন, হরফ প্রকাশনী, কলকাতা )  এবার হাদিসের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যাক । 
Muslim (9:3506) - Muhammad's father-in-laws (Abu Bakr and Umar) amused him by slapping his wives (Aisha and Hafsa) for annoying him.  According to the Hadith, the prophet of Islam laughed upon hearing this. মুহাম্মদের পত্নী আয়েশা নিজেও এ কথা বলেছেন যে মুহাম্মদ তাঁর বুকে ঘুষি মেরেছিলেন । এ হাদিসটি সব শেষে বর্ণনা করা হয়েছে । পত্নীদের চাবুক মারা প্রসঙ্গে একটি হাদিসে  এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে  - 
Kash-shaf (the revealer) of al-Zamkhshari (Vol. 1, p. 525) - [Muhammad said] "Hang up your scourge where your wife can see it"   

    
এরপর যে প্রশ্নটা আসে তা হলো, পত্নীর কোন কোন আচরণ অবাধ্যতা বলে গণ্য হবে ? এটা অনেক বড়ো বিষয় যা  আলোচনার জন্যে বৃহৎ পরিসর আবশ্যক । এখানে সে অবকাশ নেই, তাই সংক্ষেপে যতটা সম্ভব এটা বোঝার চেষ্টা করা যাক । এটা বোঝার জন্যে সবচেয়ে বেশী সহায়ক হবে এ বিষয়ে মুহাম্মদ কী বলেছেন সে কথাটা জানা ।  দেখা  যাক তিনি কী বলেছেন । এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস হলো এ রকমঃ “ইবনে আবু ওমর (রাঃ) রেওয়ায়েত করেছেন, আবু হোরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, কসম সে সত্তার! যাঁর হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ । কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজের শয্যায় আহ্বান করলে সে যদি আসতে অস্বীকার করে, তবে নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত না সে স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্ট হয়, সে পর্যন্ত আসমানবাসী ( ফিরিশতাগণ) তার উপর নাখোশ থাকে ।” ( মুসলিম শরীফ, হাঃ নং- ৩৪০৭) এরূপ হাদিস আরও বহু আছে এবং সমস্ত স’হি(আসল) হাদিসেই এই হাদিসগুলি লিপি বদ্ধ আছে । অর্থাৎ মুহাম্মদ যে এ কথাগুলি বলেছেন তা প্রশ্নাতীত । এ হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট যে পতি যখন যে মূহুর্তে স্ত্রীকে যৌন সম্ভোগের জন্যে আহ্বান করবে, স্ত্রীকে তৎক্ষণাত সাড়া দিতে হবে এবং পতির যৌন সেবায় নিয়োজিত হয়ে তাকে তুষ্ট ও তৃপ্ত করতে হবে । শারিরীক কিংবা মানসিক কিংবা অন্য কোনো অনিবার্য কারণেও পতির আহ্বানে পত্নী অসম্মতি বা আপত্তি জানাতে পারবে না । পতির যৌন আবেদন বা কামনা যতই অযৌক্তিক বা অন্যায় হোক, মুসলিম নারীকে তাতেই সাড়া দিতে হবে, কোনো অবস্থাতেই পতি অপ্রসন্ন হয় এমন কাজ সে করতে পারবে না । কেন না, আল্লাহ নারীকে তো পুরুষের সেবা করার জন্যেই সৃস্টি করেছে ।  স্ত্রীর কর্তব্য কী সে কথা  অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ইসলামি চিন্তাবিদ ইমাম গাজ্জালি তাঁর বিখ্যাত ‘ইয়াহ্ইয়া উলুমেদ্দিন’গ্রন্থে ৯২৩৫ পৃষ্ঠায়) লিখেছছেন, “স্ত্রীর উচিৎ স্বামীকে তার নিজ সত্ত্বার চেয়েও উপরে স্থান দেয়া, এমনকি তার সকল আত্মীয়স্বজনের উপর স্থান দেয়া । সে স্বামীর জন্যে নিজেকে সদা-সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখবে যেন স্বামী তাকে যখন ইচ্ছা ভোগ করতে পারে ।” ( দ্রঃ পুরুষ রচিত ধর্মে বিকলাঙ্গ নারী/ নন্দিনি হোসেন, মুক্তমনা ওয়েব সাইট )। উক্ত হাদিস এবং ইমাম গাজ্জালির উক্তি থেকে এটা স্পষ্ট যে পতির যৌন আবেদনে সাড়া না দিলে তা স্ত্রীর অবাধ্যতা বলে গণ্য হবে ।

এর পরেও প্রশ্ন থেকে যায়, পত্নী যদি মানসিক দিক বা শারিরীক দিক থেকে বা অন্য অনিবার্য কোনো কারণে পতির যৌনসেবা করার মত অবস্থায় না থাকে এবং তজ্জনিত কারণে যদি সে পতির আহ্বানে সাড়া দিতে অসম্মত হয় এবং পতির শয্যায় না যায় তা হলে কী হবে ? আল্লাহ ও তার নবী তারজন্যে কিন্তু তাকে ছাড় দেওয়ার কথা কোথাও বলে নি । অর্থাৎ কোনো অবস্থাতেই পতির শয্যায় না গিয়ে তাকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না সুতরাং স্ত্রী সাড়া না দিলে বা  দিতে না পারলে – ঘটনা যাই হোক না কেন, তা তার অবাধ্যতা বলে গণ্য হবে । আর এই অবাধ্যতার শাস্তি হিসাবে পতিকে অধিকার ( নির্দেশ ) প্রদান করা হয়েছে তার পত্নীকে প্রহার করার । এরপরেও প্রশ্ন থেকে যায় - প্রহৃত হওয়া সত্বেও যদি স্ত্রী পতির শয্যায় না যায় তা হলে কী হবে ? সেক্ষেত্রে বিধান হলো পতি তখন পত্নীকে তালাক (ডিভোর্স) দেওয়ার ভীতি প্রদর্শন করবে । ভীতি প্রদর্শন করার পরেও যদি পত্নী পদতলে গিয়ে না পড়ে তা হলে কী হবে ? পতি  তখন তাকে বর্জন (তালাক)করবে  হ্যাঁ ,এটাই ইসলামের নির্দেশ  মাওলানা মুহাম্মদ আলী তাঁর পুস্তকে সে কথাটি স্পষ্ট করে লিখেছন যার উল্লেখ উপর করা হয়েছে  ইসলাম ধর্ম পুরুষকে নারীর উপর এই যে অসীম ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করেছে তা যে ভীষণই একপেশে ও একচেটিয়া তা বলা বাহুল্যমুসলিম বুদ্ধিজীবীগণ এরূপ সমস্ত শরিয়তি আইনকেই মুসলিম ধর্মগুরুদের মনগড়া এবং অনৈশ্লামিক বলে প্রচার করেন । কিন্তু প্রকৃত ও নির্মম সত্যটি হলো মুসলিম বুদ্ধিজীবীদের এই অভিমতটাই মনগড়া ও অনৈশ্লামিক । এর প্রমাণ যে  কোরানে ও   হাদিসে রয়েছে  তা উপরে আলোচনা করা হয়েছে । তবে  এ প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখ করা ভীষণ প্রাসঙ্গিক ও জরুরী তা হলো, স্বয়ং হযরত মুহাম্মদও তাঁর দাম্পত্য জীবনে এই একচেটিয়া ক্ষমতা, অধিকার ও কর্তৃত্ব প্রয়োগ করেছেন ও ভোগ করেছেন তিনি তাঁর পত্নীদের তালাকের(ডিভোর্স) ভীতি প্রদর্শন করে বারবার তাঁর পদতলে সমর্পণ করতে বাধ্য করেছেন । না, এটা  কোনো উদ্দেশ্য প্রণোদিত মনগড়া মিথ্যা অভিযোগ বা অপপ্রচার নয়, এর সপক্ষে ভুরি ভুরি প্রমাণ জ্বলজ্বল করছে  কোরান ও হাদিসে এবং এমন কি মুহাম্মদের জীবন-চরিতেওমুহাম্মদের দাম্পত্যজীবন সদা সুখশান্তিতে ভরপুর ছিল না,  বহু অশান্তি ও কলহের ঘটনা ঘটেছিল তাঁর দাম্পত্যজীবনে   সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এটা অবিশ্বাস্য ও বেদনাদায়ক হলেও এটাই নির্মম বাস্তব ও সত্যি ঘটনা । বিভিন্ন সময়ে মুহাম্মদের পত্নীগণ তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং তার ফলে মুহাম্মদের সঙ্গে তাঁদের বহুবার কলহ-বিবাদ হয়েছে । তাঁদের অসন্তোষ বা ক্ষোভগুলি প্রশমন করতে যখন ব্যর্থ হয়েছেন মুহাম্মদ তখন আশমান থেকে আল্লাহর ওহি ও ফেরেস্তাদের নামিয়ে নিয়ে এসে এবং সর্বোপরি তালাকের ভয় প্রদর্শন করে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক পন্থায় পত্নীদের মুখ বন্ধ করেছেন । কোরানের ৩৩/২৮ নং আয়াতটিতে সেই ছবিটা ধরা পড়ে । আয়াতটির বঙ্গানুবাদ হলো- “হে সংবাদবাহক, তুমি স্বীয় ভার্যাদিগকে বল, যদি তোমরা পার্থিব জীবন ও তাহার শোভা অভিলাষ করিয়া থাক তবে এস, তোমাদিগকে (তাহার) ফল ভোগ করাইব, এবং তোমাদিগকে উত্তম বিদায়ে বিদায় দান করিব ।” ‘উত্তম বিদায়ে বিদায় দান করিব’ – এই কথাগুলির অর্থ হলো ‘তোমাদের তালাক দিয়ে বিদায় করে দেব’ । অর্থাৎ একজন পত্নী নয়, একাধিক পত্নীই মুহাম্মদের প্রতি অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ ছিলেন । তাঁরা এতটাই ক্ষুব্ধ ছিলেন যে মুহাম্মদের পক্ষে তা প্রশমন করা সম্ভব হয় নি এবং সে জন্যে তিনি একদা এক মাস গৃহত্যাগ করে মসজিদে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছিলেন । তারপরেও পত্নীদের ক্ষোভ প্রশমিত না হওয়ায় তিনি আল্লাহর ওহি নামিয়ে এনে তালাকের ভয় দেখিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন । হ্যাঁ, ঐ আয়াতের তফসিরে এই ঘটনারই বর্ণনা দেওয়া আছে । তফসীরটি এরূপঃ “মদীনা প্রস্থানের নবম বৎসরে হজরত স্বীয় পত্নীগণ হইতে বিচ্ছিন্ন   হইয়াছিলেন ও শপথ করিয়াছিলেন যে, এক মাস কাল তাঁহাদের সঙ্গ করিবেন না, কারণ এই যে, তাঁহারা তাঁহার সাধ্যাতীত বস্ত্রাদি প্রার্থনা করিতেছিলেন । এয়মনের বিচিত্র বসন ও মেসরের পট্ট-বস্ত্র, এবং এইরূপ অন্যান্য সামগ্রীর প্রতি তাঁহাদের লোভ হইয়াছিল । এই সকল হজরতের হস্তায়ত্ত ছিল না । তিনি তাঁহাদের কত্তৃক উত্তক্ত হইয়া তাঁহাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করেন, এবং এক মসজ্বেদে যাইয়া বসিয়া থাকেন, ঊনত্রিশ দিবসের পর তিনি এই আয়াত প্রাপ্ত হন ।” । ( দ্রঃ কুরআন শরীফ/গিরিশ্চন্দ্র সেন, পৃ-৪৭৬)  স্ত্রীরা ঠিক কি কী কারণে মুহাম্মদের প্রতি এত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে । সে কথা থাক। আমরা এখন অন্য আরও তিনটি আয়াতের প্রতি দৃষ্টিপাত করব যেখানে মুহাম্মদের দাম্পত্যজীবনে তীব্র অশান্তি ও কলহ এবং তা দমনে সেই তালাকের দাওয়াইয়েরই উল্লেখ রয়েছে ।  তার মধ্যে একটি হলো – “হে সংবাদবাহক, ঈশ্বর তোমার জন্য যাহা বৈধ করিয়াছেন স্বীয় ভার্যাদিগের সন্তোষ প্রয়াস করতঃ তাহা কেন অবৈধ করিতেছ ?” (আয়াত নং-৬৬/১) । অন্য আয়াত দুটি এরূপঃ “তোমরা দুই জনে (হে পয়গম্বরের দুই ভার্যা ) যদি ঈশ্বরের দিকে ফিরিয়া আইস, (ভাল হয়,) অনন্তর নিশ্চয় তোমাদের অন্তর কুটিল হইয়াছে, এবং যদি তাহার প্রতি (তাহাকে ক্লেশ দানে ) তোমরা পরষ্পর অনুকূল হও তবে নিশ্চয় (জানিও) সেই ঈশ্বর ও জেব্রিল এবং সাধু বিশ্বাসীগণ তাঁহার বন্ধু আছেন, অতঃপর দেবগণ সাহায্যকারী হয় । যদি সে তোমাদিগকে বর্জন করে তবে তাহার প্রতিপালক তোমাদিগ অপেক্ষা উত্তম মোসলমান বিশ্বাসিনী সাধনপরায়ণা পাপ হইতে প্রতিনিবৃত্তা অর্চনাকারিণী উপবাসব্রতিধারিণী  বিবাহিতা ও কুমারী নারীদিগকে তাহাকে বিনিময় দান করিতে সমুদ্যত ।” ( আয়াত দুটির নম্বর হলো – ৬৬/৩, ৪) । প্রথম আয়াতটির প্রেক্ষাপট নিয়ে দুটি মত শোনা যায়তার মধ্যে যেটি অধিক গ্রহণযোগ্য সেটা হলো এটা – “ ... পরন্তু এরূপ প্রসিদ্ধ যে, হজরত হফসার বারের দিন তাঁহার গৃহে যাইতেন, একদা তিনি হজরতের আজ্ঞাক্রমে পিত্রালয়ে গিয়াছিলেন, হজরত কেবতা কুলোদ্ভবা দাসীপত্নী মারিয়াকে ডাকাইয়া নিজ সেবায় নিযুক্ত করেন । হফসা তাহা অবগত হইয়া অসন্তোষ প্রকাশ করেন । হজরত বলেন, ‘হে হফসা, যদি আমি তাহাকে নিজের সম্বন্ধে অবৈধ করি তাহাতে তুমি কি সম্মত নও’  । তিনি বলিলেন ‘হ্যাঁ সম্মত’ । হজরত কহিলেন, ‘এ কথা কাহারও নিকটে ব্যক্ত করিবে না, তোমার নিকট গুপ্ত রহিল’ । হফসা সম্মত হইলেন । কিন্তু যখন হজরত তাঁহার গৃহ হইতে চলিয়া গেলেন, তৎক্ষণাৎ হফসা আয়েশাকে যাইয়া এই সুসংবাদ দান করিয়া বলিলেন, ‘আমরা কেবত নারীর হস্ত হইতে মুক্তি পাইয়াছি’ । পরে হযরত আয়েশার গৃহে আগমন করিলে তখ আয়েষা ইঙ্গিতে এই বৃত্তান্ত বলেন । এতদুপলক্ষে এই সুরা অবতীর্ণ হয় । অর্থাৎ মারিয়াকে ঈশ্বর তোমার প্রতি বৈধ  করিয়াছেন, তাহাকে কেন আপনার সম্বন্ধে অবৈধ করিয়া তুলিলে ও শপথ করিলে ? ” ( দ্রঃ – প্রাগুক্ত, পৃ-৬২৮, ৬২৯) । প্রকৃত ঘটনাটি তফসীরে পরিস্ফুটিত হয় নি । ঘটনাটি স্পষ্ট করা যাক । হফসা ছিলেন মুহাম্মদের স্ত্রী । তিনি যেহেতু মুহাম্মদের প্রিয় সাহাবী ও দ্বিতীয় খলিফা ওমরের কন্যা ছিলেন তাই তাঁর আত্মপ্রত্যয় ও সাহস একটু বেশী ছিল । যেদিন তাঁর সঙ্গে মুহাম্মদের থাকার কথা এমন একদিনের ঘটনা ।  মুহাম্মদকে যাতে তাঁর জন্যে অপেক্ষা না করতে হয় , তাই হাফসা পিতৃগৃহ থেকে তাড়াতাড়ি তাঁর গৃহে ফিরে এসেছেন । এসে দেখেন যে মুহাম্মদ মারিয়ার সঙ্গে তাঁর ঘরে যৌন সঙ্গমে লিপ্ত । মারিয়া ছিলেন তাঁর একজন দাসী মাত্র, কিন্তু ছিলেন অতিশয় সুন্দরী । হাফসা মুহাম্মদকে মারিয়ার সাথে রতিক্রিয়ায় মত্ত দেখবেন তা তাঁর কল্পনাতেও ছিলেন নাসেই ঘটনা দেখে হাফসা অতিশয় ক্ষুব্ধ ও ক্রদ্ধ হয়ে ওঠেন এবং উচ্চৈস্বরে মুহাম্মদকে ভর্ৎসনা করতে শুরু করেন । পরিস্থিতি সকলের জানাজানি হয়ে যায় সেই ভয়ে মুহাম্মদ হাফসার নিকট শপথ করেন যে জীবনে আর কোনো দিন মারিয়ার দেহ স্পর্শ  করবেন না । কিন্তু মুহাম্মদ সুন্দরী মারিয়ার প্রতি এত আকৃষ্ট ছিলেন যে তাঁর পক্ষে মারিয়া ছেড়ে বেশীদিন থাকা সম্ভব ছিল না । ফলে মুহাম্মদের জন্যে ঐ আয়াতটি একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছিল ।
মুহাম্মদ স্ত্রীদের বাধ্য করার জন্যে প্রহার করেছিলেন কী না জানা নেই, কিন্তু তিনি যে বারবার তালাক, আল্লাহর গজব ও ফেরেস্তাদের অভিশাপের ভয় দেখিয়েছিলেন তা নিয়ে সংশয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই । সুতরাং মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা যতই ভন্ডামি করুন না কেন, আরব আমির শাহীর আদালত যে শরিয়ত তথা ইসলামি আইন মেনেই রায় দিয়েছে তা সন্দেহাতীতভাবে সত্যি ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে অন্যান্য ধর্মেও স্ত্রীকে প্রহার করার নির্দেশ বা বিধান রয়েছে ।  হিন্দু ধর্মও ব্যতিক্রম নয় । শতপথ ব্রাহ্মণের একটি শ্লোক এরূপঃ ‘তেমনি স্বামীও স্ত্রীকে পেটাবে, যাতে তার নিজের শরীর বা সম্পত্তির ওপর কোনো অধিকার না থাকে ।’ ( দ্রঃ সুকুমারী ভট্টাচার্যের ‘প্রাচীন ভারতে নারী সমাজ’, পৃ-৫০) । হিন্দু সমাজের বুদ্ধিজীবীগণ সাধারণভাবে এই অরুচিকর, নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য ধর্মীয় বিধি-বিধানগুলি আড়াল করার অপচেষ্টা না করে অকপটে তুলে ধরেন এবং এগুলি বর্জন করার নির্ভীক আহ্বান জানিয়ে হিন্দু সমাজের সংস্কার ও উন্নতি করার প্রয়াস করেন । অন্যান্য সমস্ত ধর্মীয় সমাজেও অনুরূপ ধারাবাহিক সাধু প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় । ব্যতিক্রম কেবলই মুসলিম সমাজ । এ সমাজের বুদ্ধিজীবীরা এসব কুৎসিত, জঘন্য ও মানবতাবিরোধী বিধি-বিধানগুলি অস্বীকার ও আড়াল করে ইসলাম, কোরান ও মুহাম্মদকে নিয়ে অকারণ মিথ্যা বড়াই করেন । তাঁরা বোঝেন না বা বোঝার চেষ্টা করেন না যে তারফলে মুসলিম সমাজের অকল্যাণ বৈ কল্যাণ হয় না । 


পুনশ্চঃ মুহাম্মদও তাঁর স্ত্রীদের প্রহার করতেন তাঁর প্রমাণ হাদিসে পাওয়া যায় ।  সেরূপ একটি হাদিস স্বয়ং আয়েশা, মুহাম্মদের প্রিয়তমইয়্ব কনিষ্ঠতম পত্নী, বর্ণনা করেছেন । হাদিস এরূপঃ Muslim (4:2127) - Muhammad struck his favorite wife, Aisha, in the chest one evening when she left the house without his permission.  Aisha narrates, "He struck me on the chest which caused me pain." আর একটি হাদিসেও এর প্রমাণ রয়েছে - Muslim (9:3506) - Muhammad's father-in-laws (Abu Bakr and Umar) amused him by slappinghis wives (Aisha and Hafsa) for annoying him.  According to the Hadith, the prophet of Islam laughed upon hearing this.
(Souirce: http://www.thereligionofpeace.com/quran/003-wife-beating.htm

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...