Sunday, January 26, 2014

২৬ শে জানুয়ারী দিনটিকে আমার প্রজাতন্ত্র দিবস বলে মনে হয় না


আজ আমাদের দেশ ৬৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করছে সাড়ম্বরে, মহাসমারোহে। কিন্তু ১২০ কোটি মানুষের ১০০ কোটিই জানে না এটা আবার কেমন দিবস। মানুষ নবি দিবস জানে, শ্রীকৃষ্ণের জন্ম দিবস জানে, রাম নবমী জানে, গুরু নানকের জন্ম দিবস জানে, গুরুর জন্ম দিবস জানে, একাদশী জানে, কবে কোন দিন কোন তিথিতে স্বামীর মঙ্গল কামনা করে উপবাস থাকতে হয় জানে, কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবস কী তারা জানে না।  তবু সাড়ম্বরে, ধূমধাম করে বছর বছর দিবসটি উদযাপন করা হয়, জলের মত খরচ করা হয় দেদার টাকা। যারা উদযাপন করে ঢাকঢোল পিটিয়ে তারা সবাই ভালো করেই জানে যে দেশের অধিকাংশ মানুষ  প্রজাতন্ত্র  কী সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তবু তারা মহা উৎসাহে ২৬ শে জানুয়ারীর দিন সকাল বেলা পতাকা তোলে, প্রজাতন্ত্রের মহিমা কীর্তন করে, প্রজাতন্ত্রের অহঙ্কার করে, দেশ কত এগোলো তার  লম্বা লম্বা ফিরিস্তি দেয়, হাসপাতালে যারা সারা বছর অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে মেঝেতে পড়ে থাকে অবহেলায় তাদের কাছে গিয়ে দু-একটা ফল তুলে দেয়, আর ক্যামেরার সামনে পোজ দেয়, অর্ধমৃত মানুষগুলো হঠাৎ এসব দেখে ভ্যাবাচাকা খেয়ে এ ওর দিকে ফ্যালফ্যাল করে চাই, বাবুরা ঝড়ের বেগে আসে আর কিছু ফল বিতরণ করে আবার ঝড়ের বেগে চলে যায়। এভাবে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করে শাসকশ্রেণী মানুষকে ঠকায়, বিশ্ববাসীকেও ঠকায়।
আসলে শাসক শ্রেণী চায় না যে দেশের মানুষ জানুক প্রজাতন্ত্র দিবস কী, কেন এই দিবস? মানুষ প্রজাতন্ত্রের মানে জানলে তাদের অনেক অসুবিধা - শ্রমিকের শ্রম সস্তা দরে কিনে তাদেরকে সহজে ঠকানো যাবে না, সহজ হবে না চাষির কাছে বেশী দামে সার, বীজ, বিষ ইত্যাদি বিক্রি করা ও তাদের ফসল সস্তায় ক্রয় করা, বনবাসীকে উচ্ছেদ করে বনের দখল নেওয়া সহজ হবে না, খাল-বিল-নদী-সমুদ্র থেকে মৎস্যজীবীদের উচ্ছেদ করে সেগুলো কব্জায় রেখে অনায়াসে ভোগ করা সহজ হবে না, পাহাড়বাসীকে পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করে পাহাড়ের সম্পদ লুঠ করা সহজ হবে না, মানুষের রুজি-রোজগারের প্রতিদিনের সংগ্রামকে আইনশৃঙ্খলার দোহায় দিয়ে লাঠি-গুলি চালিয়ে দমন করা সহজ হবে না, জাত-পাতের দোহাই দিয়ে মানুষে মানুষে মারামারি-কাটাকাটি লাগিয়ে রাখা সহজ হবে না, অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা মানুষগুলোকে ধর্মের গাঁজা-চরস খাইয়ে মসজিদে-মন্দিরে-গীর্জায় বুঁদ করে রাখা সহজ হবে না, অর্ধাহারে-অনাহারে-বেকারত্বে থাকা মানুষকে ভাগ্যের দোহায় দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা সহজ হবে না, দেশের তথা দেশের মানুষের  সকল সম্পদ যেমন  বন-জঙ্গল, পাহাড়, নদ-নদী, ইত্যাদি আত্মসাৎ করা সহজ হবে না, এ রকম হাজারো অসুবিধা রয়েছে শাসক শ্রেণির। 
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আর মর্যাদার প্রতীক জাতীয় পতাকা, জেনে নিন  তিরঙ্গার অজানা কাহিনী | Independence Day 2020 Interesting Facts About  Indian Tricolour Flag You Should ...

তাই প্রজাতন্ত্র দিবস কী তা মানুষ জানুক – এটা শাসক শ্রেণী একদমই চায় না। চায় না কারণ, জানলে তাদের সমস্ত অধিকার বুঝে নিতে চায়বে তারা, তাদের বেঁচে থাকার জন্যে অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা- স্বাস্থ্য ন্যূনতম এই পাঁচটি জিনিষ ন্যূনতম পরিমাণে সরকারের কাছে দাবী করবে, দাবী করবে এটা জেনে যে এটা তাদের ন্যায্য অধিকার, দাবী করবে তাদের ভাষার অধিকার, সংস্কৃতির অধিকার, আওয়াজ তুলবে জাতপাত ও বর্ণবিভেদের বিরুদ্ধে, দাবি করবে সমান অধিকার ও ক্ষমতা পাবার, দাবীতে দাবীতে পাগল করে দেবে রাষ্ট্রকে তথা শাসক দল ও শোষক শ্রেণীকে। প্রাজাতন্ত্রের মানে জানলে গতর খাটানো মানুষেরা বুঝে যাবে যে রাষ্ট্রের চোখে সব মানুষই সমান নয়, রাষ্ট্র সকলের সঙ্গে সুবিচার করে না, রাষ্ট্রটা মোটেই নিরপেক্ষ নয় এবং রাষ্ট্রটা আর যাদেরই হোক তাদের নয়। প্রজাতন্ত্র কী জিনিষ জানতে পারলে মানুষ তখন রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যেতে চাইবে, একা যেতে না পারলে অন্ততঃপক্ষে ক্ষমতার ভাগ নিতে চাইবে। যেদিন মানুষ এ সব বুঝবে সেদিন তাদেরকে ঠেকানো যাবে না কোনোভাবেই। হয় ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, নয়তো ক্ষমতার ভাগ দিতে হবে। শাসক শ্রেণী তাই প্রাণপণ চেষ্টা করে প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবসগুলির অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কে মানুষকে অজ্ঞ করে রাখতে। শাসক শ্রেণী তাই  মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবিয়ে রেখেই স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করে। এভাবেই ৬৪ বছর ধরে তারা ভারতবাসীকে ঠকিয়ে আসছে।
আজ ২৬ শে জানুয়ারী, পতাকা উঠছে, কুচ-কাওয়াজ হচ্ছে, আকাশে কত যুদ্ধ বিমান উড়ছে, কত বাদ্যি বাজছে, এ সব বসে বসে দেখছি টিভির পর্দায়। পাশাপাশি শুনছি কত প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি, শুরু হয়ছে এই ফুলঝুরি ছোটানো গতকাল থেকে অথচ চারিদিকে রোজরোজ নারীরা ধর্ষিতা হয়, রাষ্ট্র কিছুই করে না তা প্রতিরোধ করার, তারপরেও নারীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরির ছোটে নেতাদের কন্ঠে, আজও ছুটছে সমানে, আর এদিকে ২০ বছরের সাঁওতাল সমাজের মেয়েটিকে তার সমাজেরই মোড়ল-মাতব্বর যারা গণধর্ষণ করতে উস্কানি দিল, শাসক দলের সেই নেতাকর্মীরা বহাল তবিয়তে জেলের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ক্লাবে ক্লাবে, অফিসে, স্কুলে গিয়ে জাতীয় পতাকা তুলছে, আর ঐ ধর্ষিতা মেয়েটা হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে শারিরীক ও মানসিক অসহ্য যন্ত্রণায় ছটট করছে, সে জানে না কী অপরাধে তার সব শেষ হয়ে গেলো, সে এও জানে না হাসপাতাল থেকে ফিরে গিয়ে সে কোথায় ঊঠবে, কারণ তাকে নষ্ট মেয়ে বলে শুধু গণধর্ষণই করেনি, সমাজ থেকেও বহিষ্কার করেছে শুধু সাঁওতাল সমাজের ঐ একটি মেয়েরই নয়, হাজারে হাজারে, লাখে লাখে নারীর অবস্থাও তদ্রূপ।   
আজ ২৬ শে জানুয়ারী, পতাকা উঠছে, কুচ-কাওয়াজ হচ্ছে দিল্লীতে, রাজ্যে রাজ্যে সমস্ত রাজধানী শহরে, ভাষণ বিলানো হচ্ছে দেদার, বড়ো বড়ো ভাষণ যে ভাষণে বলা হচ্ছে – ভারত প্রজাতান্ত্রিক দেশ, এখানে বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্ব স্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, ধর্ম না পালনের স্বাধীনতা, সসম্মানে ও স্বমর্যাদায় বেঁচে থাকার স্বাধীনতা-সহ সমস্ত স্বাধীনতা সুরক্ষিত। রাষ্ট্র নেতাদের এ সব ভাষণ যে শুধুই ভাষণ এবং বিলকুল মিথ্যা ভাষণ সে কথা দুনিয়া শুদ্ধ লোক জানে। কোথায় আমাদের বাক স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা? আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন লেখক তসলিমা নাসরিন আজ দিল্লীতে নির্বাসিত। ভারত সরকার তাঁকে এ দেশে থাকার অনুমতি দিয়েছে, সেই বৈধ অনুমতির জোরে ভারতের যে কোনো স্থানে থাকার স্বাধীনতা তাঁর আছেরাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তাঁর এ অধিকার যাতে কেউ লঙ্ঘন করতে না পারে তা দেখা ও সুনিশ্চিত করা। অথচ রাষ্ট্রই তাঁকে কলকাতায় আসতে দিচ্ছে না। গত বছর কলকাতা বই মেলায় তাঁর লেখা একটা বইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আটকে দিল সরকার। ঐ একই সময়ে বিশ্বখ্যাত লেখক সলমান রুশদি কলকাতা বই মেলায় আসতে পারলেন না সরকার আসতে দিল না বলে। কেন তসলিমা ও সলমন রুশদির অধিকার হরণ করলো সরকার? কারণ, তাঁরা মুসলিম ধর্মাবেগে আঘাত করেছেন। কে বলেছে? মুসলিম ধর্মের নেতারা। তাই ওঁদের কলকাতায় পা ফেলার অধিকার নেই। এই হলো এ দেশে মানুষের বাক স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ ও সুরক্ষিত থাকার নমুনা। এ দেশে লেখকের বাক স্বাধীনতা নেই, কিন্তু ধর্মীয় নেতাদের সে অধিকার আছে। তারা যা কিছু বলতে পারে, মুন্ডু কাটার ফতোয়া দিতে পারে, এ ফতোয়া বেআইনী তবুও তাদের অধিকার আছে তা দেওয়ার। একই ফতোয়া দিয়েছিলো দঃ চব্বিশ পরগণা আক্রা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক মোরসেলিন মোল্লার উপরে একটা নিরীহ প্রবন্ধ লেখার অপরাধেতাঁকে না পেয়ে তাঁর বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতিরা। মোরসালিনকে পুলিশ নিরাপত্তা দেয় নি, দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগও নেয় নি, ঘুরিয়ে বলেছিলো ফতোয়াবাজ মোল্লাদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করতে। মোরসালিন অগত্যা তাই করেছিলেন, হাত জোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন এবং আর কোনোদিন ঐ রকম লেখা লিখবেন না বলে থানায় বসে মোল্লা ও পুলিশের কাছে মুচলেকাও লিখে দিয়েছিলেন। একই অবস্থা হয়েছিলো পত্রিকা সম্পাদকের যাঁর পত্রিকায় লেখাটা বেরিয়েছিলো। এ ঘটনা বাম সরকারর আমলের। প্রায় একই সময়ে ঐ একই কারণে আমারও মুন্ডুচ্ছেদ করার ফতোয়া দেওয়া হয়েছিলো। আমাকে পুলিশ নিরাপত্তা দেয় নি, যারা আমাকে হত্যা করার ফতোয়া দিয়েছিলো তাদের বিরুদ্ধে আমার লিখিত অভিযোগও নেয় নি। এই হচ্ছে আমার দেশ, আমাদের প্রজাতন্ত্র, আমাদের যাবতীয় অধিকার সুরক্ষিত থাকার নমুনা! আসল কথা হলো, এ দেশে সীমাতিরিক্ত স্বাধীনতা আছে শাসক শ্রেণীর, শাসক দলের নেতা-কর্মীদের, শাসক দল আশ্রিত চোর-গুন্ডা-বদমায়েশদের, ধাপ্পাবাজ ও প্রতারক ধর্মীয় নেতাদের ও পুলিশের, স্বাধীনতা নেই সাধারণ মানুষের, লেখকের ও নারীদের।
তাই প্রজাতন্ত্র দিবসের আসল মানে যাই থাক, আমার কাছে এ দিনটি প্রতারণা দিবস ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না। এ দিনটিকে প্রজাতন্ত্র দিবস বলে মনে হয় না, বরং প্রজা-নিয়ন্ত্রণ, প্রজা-নিষ্পেষণ ও প্রজা-হরণ দিবস বলেই মনে হয়।
   
       

Wednesday, January 22, 2014

রাজ্যসভার জন্যে তৃণমূল প্রার্থী আহমদ হাসান মুসলিম মৌলবাদীদের প্রতিনিধি, তিনি জিতলে ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাত শক্ত হবে


মমতা ব্যনার্জী তাঁর দলের রাজ্যসভার পাঁচটি শুন্যপদে নির্বাচনের জন্যে চারজনের একটি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন। চতুর্থ জনের নাম আহমাদ হাসান ইমরান। মমতার দল আপন শক্তির জোরে তিনজন প্রার্থীকে কে নির্বাচনে জেতাতে সক্ষম। চতুর্থ আসনে জয়লাভ করবে বামফ্রন্টের প্রার্থী। পঞ্চম আসনে জেতার জন্যে প্রয়োজনীয় বিধায়ক কোনো দল বা জোটের নেই। সেই আসনের জন্যে মমতা আহমাদ হাসান ইমরানকে চতুর্থ প্রার্থী মনোনীত করেছেন। স্বভাবতই তাঁর এই চতুর্থ প্রার্থীর জেতা একেবারেই অনিশ্চিত। একটি নিম্নরুচি ও নোংরা রাজনীতির অঙ্ক কষেই মমতা ইমরানকে চতুর্থ প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে বলে অনেকেই মনে করছেন। রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মতে অনিশ্চিত আসনে আহমদ হাসানকে প্রার্থী করে তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সংখ্যালঘু তাসটিই আরো একবার খেলে  খেলে দিলেন তাঁর আশা তিনি এ রকম একটি অপকৌশলের সাহায্যে এক ঢিলে দুটো পাখি মেরে বাজিমাত করতে সক্ষম হবেন। আহমাদ হাসানকে যদি জেতানো যায় তবে তিনি হবেন একদিকে মমতার একজন পুতুল-সাংসদ, অন্যদিকে মুসলিম মৌলবাদীরাও বেজায় তুষ্ট হবে। ইমরান কেনো সাংসদ হলে মমতার ইশারায় পুতুলবৎ নাচবেন তা বুঝে নেওয়া যাক।  
ইমরান একজন সাংবাদিক বেশ কয়েক বছর ধরে ‘কলম’ নামের একটি বাংলা সাপ্তাহিক তিনি বের করেছেন। তাঁর খুব সখ  ছিলো, সাপ্তাহিক ‘কলম’কে দৈনিক কলম’ করবেন। কিন্তু কিছুতেই সফল হতে পারছিলেন না। তাঁর সে সাধ ইতিমধ্যেই পূরণ হয়েছে মমতা এবং তাঁর আশীর্বাদ পুষ্ট ‘শারদা’র কর্ণধার সুদীপ্তর সৌজন্যে। জনগণের আত্মসাৎ করা টাকায় সুদীপ্ত কিছু দৈনিক কাগজ এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম কেনেন বলে শোনা যায়। শোনা যায় ইমরানের সাপ্তাহিক ‘কলম’টি  শারদা কোম্পানীর মালিক সুদীপ্ত সেনের অর্থায়নে ‘দৈনিক কলমে’ উন্নীত হয়অবশ্য তার জন্যে দুর্মুখরা বলে থাকেন যে, ইমরানকে একটা মুচলেকা লিখে দিতে হয়েছিলোসেটা এ রকম -‘দৈনিক কলম’ তৃণমূল সরকারের পক্ষে প্রশ্নহীন ভূমিকা পালন করবে এবং একই সঙ্গে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লাগাতার কুৎসা করে যাবে।  এহেন ইমরান রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়ে গেলে তিনি যে মমতার একজন পুতুল-সাংসদ হিসেবে কাজ করবেন তা বলা বাহুল্য
আর এ কথাও সর্বজন বিদিত যে মমতা সাংসদ হিসেবে অধিক পছন্দ করেন সেই মানুষদেরই  যাঁরা তাঁর প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শনে কোনো প্রকার দ্বিধা করেন না। এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা যে প্রথম তিন প্রার্থী – মিঠুন চক্রবর্তী, যোগেন চৌধুরী ও কে ডি সিং – অপেক্ষা ইমরান অনেক বেশী পরীক্ষিত, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য।  
এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কেনো মমতা ইমরানের মতো এত অধিক অনুগত, নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একজন সাংবাদিক-সৈনিককে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় বাছাইয়ের প্রার্থী হিসেবে ভাবতে পারলেন না? তাছাড়া মমতার পছন্দের তৃতীয় প্রার্থীটি হলেন ঝাড়খন্ডের মানুষ এবং একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার মালিক হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে আপাদ-মস্তক ডুবে থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত একজন ভিন রাজ্যের মানুষের প্রতি মমতা যতটা আস্থা রাখতে পারলেন ইমরানের প্রতি তিনি ততটা আস্থা কেনো  রাখতে পারলেন না? কেনো ইমরানকে তিনি ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন? এর ফলে ইমরানকে তো এখন সেই কংগ্রেস ও সিপিএমের অনুগ্রহের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে যাদের বিরুদ্ধে অবিরাম কুৎসা করেই তিনি মমতার আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন এই কেনো গুলির পেছনে নিশ্চয় যথেষ্ট কারণ নিহিত আছে। প্রথম কারণটা কি এই যে মমতা ইমরানকে রাজ্যসভার জন্যে যথেষ্ট উপযুক্ত প্রার্থী বলে মনে করেন নি, তাই নিশ্চিত জেতা কোনো আসন তাঁর জন্যে বররাদ্দ করেন নি? দ্বিতীয় কারণটি এমন হতে পারে যে, ইমরান সাংসদ পদে অনুপযুক্ত হলেও ঐ পদের জন্যে সংখ্যালঘু তাসটি(আসলে সাম্প্রদায়িক তাস) খেলার ক্ষেত্রে তিনিই বেশী উপযুক্ত ও নির্ভরযোগ্য। কারণ, তিনি একদিকে যেমন মমতার অতি অনুগত ও বিশ্বস্ত সাংবাদিক, অপরদিকে তেমনি মুসলিম মৌলবাদীদের একজন জবরদস্ত প্রতিনিধিও বটে। তাই তাঁকে যে আসনেই প্রার্থী করা হোক (হোক না অনিশ্চিত আসন, হোক না অকৃতকার্য) মুসলিম মৌলবাদীরা তাতেই ভীষণ তুষ্ট হবে এবং মমতাকে মুসলিম দরদি বলে গলা ফাটানোর মাত্রাটা  আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে মুসলিম মোল্লাদের পদলেহনে এ দেশে যে জঘন্য প্রতিযোগিতা চলে রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও অরাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনদের মধ্যে তার তুলনা সারা পৃথিবীতে মেলা ভার। সেই কারণে মমতার আশা যে মুসলিম মৌলবাদীরা পাছে অসন্তুষ্ট বা ক্ষুব্ধ হয় এ ভয়ে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট শেষ পর্যন্ত আহমাদ হাসান ইমরানকেই সমর্থন দিতে বাধ্য হবে। আর যদি তা না হয়, তাহলেও  তাঁর লাভ হবে। তখন কংগ্রেস ও বামফ্রন্টকে মুসলিমবিরোধী বলে প্রচার করার একটি নতুন সাম্প্রদায়িক  অস্ত্র  তাঁর হস্তগত হবে
আহমদ হাসান ইমরানকে  মমতা সাংসদ পদের জন্যে যথেষ্ট উপযুক্ত প্রার্থী ভাবতে পারলেন না, বরং সংখ্যালঘু সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তথা মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ট্রাম্প কার্ড হিসেবে ভাবলেন ও ব্যবহার করলেন, এটা ইমরানের পক্ষে সম্মানের না অসম্মানের, মানের না অপমানের, মর্যাদার না অমর্যাদার তা একজন নির্বোধ মানুষও বোঝেন। আর এ অসম্মান ও অপমান শুধু ইমরানকেই নয়, মমতা আসলে অপমান করলেন ইমরান যাদের প্রতিনিধি সেই মৌলবাদীদেরওকিন্তু তবুও ইমরান ও তাঁর শিবির খুশীতে গদগদ, ডগমগ। যারা ক্ষমতালোভী এবং অর্থ, যশ ও খ্যাতির কাঙাল তাদের অবশ্য আত্মমর্যাদার কথা ভাবলে চলে না।   
মমতার এহেন সাম্প্রদায়িক তাস খেলার চালে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট যে অনেকটাই কাবু হয়ে পড়বে তার কিছু লক্ষণ ইতিমধ্যেই ফুটে উঠেছে। সিপিএমের দুই নেতা - বিধায়ক আনিসুর রহমান ও বিধায়ক রেজ্জাক আলি মোল্লা – ইতিমধ্যেই ইমরানকে প্রার্থী করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দল হিসেবে সিপিএম ও ফ্রন্টের অন্যান্য শরিক দল, এস.ইউ.সি ও কংগ্রেস কী সিদ্ধান্ত নিবে তা জানার জন্যে আমাদের আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিরোধী দলগুলি যদি মমতার পাতা ফাঁদে পা দেয় এবং মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ভুল অঙ্কের বশবর্তী হয়ে ইমরানকে রাজ্যসভায় যাওয়ার ছাড়পত্র দেয় তবে তা ভয়ঙ্কর ক্ষতি ডেকে আনবে এ রাজ্যের তথা এ দেশের। কারণ, ইতিমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করছি যে অতীতের কংগ্রেস ও বাম সরকারে তুলনায় মমতার অধিক মাত্রায় মুসলিম মৌলবাদীদের তোয়াজ করার ফলে তাদের ঔদ্ধত্য অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মমতার আস্কারা পেয়ে অনেক সময় তারা এত দাপাদাপি করছে যা গণতন্ত্রের কাছে ক্রমশঃ হুমকি হয়ে উঠছে। এর ফলে আমরা একটা জিনিষ লক্ষ্য করছি, তাহলো,  হিন্দু সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তিগুলিরও শক্তি ও সক্রিয়তা বাড়ছে। এই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে আহমদ হাসান ইমরান এ রাজ্য থেকে সাংসদ নির্বাচিত হলেকারণ এর ফলে তৃণমূলের শুধু শক্তি বৃদ্ধি ঘটবেনা, একই সঙ্গে শক্তি বৃদ্ধি ঘটবে মুসলিম মৌলবাদীদেরও। আর মুসলিম মৌলবাদীদের শক্তি বৃদ্ধি ঘটলে তার সাথে সাথে যে হিন্দু মৌলোবাদিদেরও শক্তি বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।
আহমদ হাসান ইমরানকে একজন সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি ভাবলে তা হবে একটা প্রকাণ্ড রকমের ভুল। মুসলিমরা এ রাজ্যে জনসংখ্যার ২৫%, সুতরাং এ রাজ্য থেকে যখন পাঁচ জন সদস্য রাজ্যসভায় নির্বাচিত হবেন তাঁদের মধ্যে আহমদ হাসান ইমরান হবেন একজন মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি – এতো ভালোই, এতে মন্দের কি আছে? ব্যাপারটাকে এতো সহজভাবে দেখলে ভুল হবে। কারণ, ইমরান মুসলিম সমাজের একজন সাধারণ প্রতিনিধি মাত্র নন। আগেই বলেছি যে তিনি মুসলিম মৌলবাদীদের একজন জবরদস্ত প্রতিনিধি। আমি তাঁর চিন্তাধারা ও মতাদর্শ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরেই অবগত। এক দশকেরও বেশী সময় আমি তাঁর সাপ্তাহিক ‘কলমে’র নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম এবং সেই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি যেদিন থেকে দৈনিক পত্রিকায় উন্নীত হয়েছে সেদিন থেকেই আমি তার গ্রাহক হয়েছি। ‘কলমে’র একজন নিয়মিত গ্রাহক ও পাঠক হওয়ার সুবাদে আহমদ হাসান ইমরান কোন চিন্তাধারা ও মতাদর্শে বিশ্বাসী তা আমি খুব ভালো করেই জানি। ইমরান সাহেব যে মুসলিম মৌলবাদীদেরই একজন প্রতিনিধি ও মুখপাত্র তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাঁরা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। তসলিমার বই ‘দ্বিখন্ডিত’ নিষিদ্ধ করার জন্যে মুসলিম মৌলবাদীরা কত দাপাদাপি করেছিলো তা আমরা জানি। ইমরান ছিলেন তাঁদেরই একজন মুখপাত্র। তাঁদের সন্তুষ্ট করার জন্যে তৎকালীন তথাকথিত বাম সরকার বইটি নিষিদ্ধও  করেছিলো। কিন্তু সেটা যে বাক-স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের উপর প্রবল আক্রমণ ও আঘাত ছিলো তা কলকাতা  হাইকোর্টের রায়ে প্রমাণিত হয়ে গেছে। কিন্তু ইমরান সাহেবরা যেহেতু বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না, তাই তাঁরা সেই রায়কে মেনে নিতে পারেন নি, তাঁরা সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলো সুপ্রীম কোর্টে ঐ রায়কে আটকানোর জন্যে। তসলিমার উপর হায়দ্রাবাদ শহরে যখন মুসলিম  মৌলবাদীরা হামলা করেছিলো তখন সেই হামলার ঘটনাকেও সমর্থন জানিয়েছিলেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, এ রাজ্যের মুসলিম মৌলবাদীরা কলকাতা শহরে ফতোয়া দিয়েছিলো যে তসলিমার শিরচ্ছেদ করবে তাকে অপরিমিত টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে। ঐ ফতোয়াবাজদের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইমরানও ইমরান সাহেবরা এতোটাই গণতন্ত্রবিরোধী যে তসলিমাকে কলকাতা থেকে তাড়ানোর দাবীতে তাঁরা কলকাতা অবরোধ করে এমন তান্ডব চালিয়েছিলো যে সামলাতে সরকারকে মিলিটারি পর্যন্ত নামাতে হয়েছিলো। সম্প্রতি মুসলিম মৌলবাদীদের তোয়াজ করতে মমতার সরকারের পুলিশ বাংলা বৈদ্যুতিক চ্যানেল ‘আকাশ আট’কে ভয় দেখিয়ে তসলিমার লেখা মেগা সিরিয়াল ‘দুঃসহবাস’- এর প্রদর্শন বন্ধ করে দিয়েছে। যারা এই মেগা সিরিয়ালটি বন্ধ করার দাবী জানিয়ে ছিলো তাদের একজন অন্যতম ছিলেন এই আহমাদ হাসান ইমরান। সলমান রুশদিও কলকাতায় আসতে পারেন নি তাঁদের বাধাতেইসলমান রুশদি ও তসলিমার অপরাধ তাঁরা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না এবং ইসলামের সমালোচনা করেন। সলমান রুশদিকে যখন  ‘কোতল’ করার ফতোয়া দিয়েছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি তখন সেই ফতোয়াকেও  তাঁরা সমর্থন করেছিলেন। আজ থেকে ৭/৮ বছর আগে দঃ চব্বিশ পরগণার আক্রা হাই মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মোরসেলিন মোল্লাকে হত্যা করার জন্যে তাঁর বাড়িতে অগ্নি সংযোগ করেছিলো মুসলিম মৌলবাদীরা। তাঁর অপরাধ ছিলো তিনি একটি প্রবন্ধে কিছু যুক্তিপূর্ণ কথা লিখেছিলেন। সেই কথাগুলির মধ্যে একটিতে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, কোনো বিষয়ে যদি কোরান ও বিজ্ঞানে দুরকম কথা লেখা থাকে তবে কোনটাকে সত্য বলে ধরতে হবে? অর্থাৎ তিনি কোরানের প্রতি অন্ধ আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন মাত্রশুধু এই অপরাধে তাঁকে মুরতাদ ঘোষণা দিয়ে হত্যা করার ফতোয়া দেওয়া হয়েছিলো। ফতোয়া দেওয়া হয়েছিলো যে পত্রিকায় মোরসেলিন লিখেছিলেন সেই পত্রিকা ‘প্রগতি’র সম্পাদকের (যিনি একজন মুসলিম) উপরেও এবং তাঁর বাড়িতেও আগুন লাগিয়ে তাঁকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। ঐ একই ফতোয়া দেওয়া হয়েছে আমার উপরেও ২০০৫ সালেবামফ্রন্ট সরকার মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকি করণের যতবার চেষ্টা করেছে ততবার বাধা দিয়েছে মুসলিম মৌলবাদীরা যাদের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন ও কলম ধরেছেন এই ইমরান সাহেব। এর ফলে বামফ্রন্ট সরকার মুসলিমদের ভালোর জন্যে অন্তত এই যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে চেয়েছিল তা ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিলোইমরান সাহেবরা মুখে আধুনিক শিক্ষার কথা বললেও আসলে তাঁরা পশ্চাদপদ মাদ্রাসা শিক্ষার ধারক ও বাহক তাঁরা এরূপ চিন্তাধারায় বিশ্বাস করেন যে আধুনিক শিক্ষা মানুষকে বিপথগামী করে, আর মাদ্রাসা শিক্ষা তথা কোরান-হাদিসের শিক্ষা মানুষকে সুপথগামী করে। এত পশ্চাদপদ ধারণা পোষণ করেন এই ইমরান সাহেবরা। তাঁরা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন না, বিশ্বাস করেন না আধুনিক ও প্রগতিশীল আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থায়। তাঁরা শরিয়ত আদালতকে বেশী মান্যতা দেন দেশের সাংবিধানিক আদালতগুলি অপেক্ষা। তাঁরা নারীর স্বাধীনতা ও সমানাধিকারে বিশ্বাস করেন না, তাই মধ্যযুগীয় বহু বিবাহ ও তালাক প্রথা বাতিল করার ন্যায়সঙ্গত দাবী উঠলেই হৈ হৈ করে মারতে আসেন। সকল ধর্মীয় সমাজেই সংস্কার হয়েছে, এবং তার সুফল সে সব সমাজের মানুষ ভোগ করছেন। ভারতে বাইরে ২/৪টি দেশ ব্যতীত সকল মুসলিম দেশেই মুসলিম সমাজে সংস্কার হয়েছে, সংস্কার হয়েছে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনেওকিন্তু এদেশে  মুসলিম মৌলবাদীরা আজও অনড়, তাঁরা কিছুতেই সংস্কার হতে দিবেন না। আমাদের মতো কতিপয় মানুষ সংস্কারের কথা বললে আমাদেরকে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে আমাদের শিরচ্ছেদ করার ফতোয়া দেয়। আর এই সময়ে আহমদ হাসান ইমরানরা কলম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন ঐ ফতোয়াকে যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়সঙ্গত প্রমাণ করার জন্যে। এই হলো অল্প কথায় আহমদ হাসানের পরিচয়। এই ইমরানকে তাঁর আসল পরিচয় আড়াল করে তৃণমূল কংগ্রেস মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। মুসলিম মৌলবাদীরাও তাঁকে  মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরছে। এবং স্বয়ং ইমরানও নিজেকে মুসলিম সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই পরিচয় হলো এক মস্তবড় ধোঁকা ও প্রতারণা। তৃণমূল কংগ্রেস ও মুসলিম মৌলবাদীরা একযোগে পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে, বিশেষ করে মুসলমানদের ধোঁকা দিয়ে তাদের কার্য সিদ্ধি করতে চাইছে। যদি তারা কার্য সিদ্ধি করতে পারে তা হলে পশ্চিমবঙ্গের আরো অনেক বড়ো ক্ষতি  ও সর্বনাশ হবে।
সেই ক্ষতি  ও সর্বনাশকে ঠেকাতে পারে একমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, বিশেষ করে কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) দল। বামফ্রন্ট তাদের একজন প্রার্থীকে জেতানোর পর তাদের হাতে যত সংখ্যক ভোট থাকবে এবং কংগ্রেসের হাতে যত ভোট আছে তা  একজন প্রার্থীর পক্ষে প্রদান করলে সে প্রার্থী জয়ী হতে পারেন। তাই তাদের উচিত হলো ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তির প্রতিনিধির জয়কে প্রতিহত করতে একজন অরাজনৈতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ গুণীজনকে প্রার্থী করা এবং তাঁকে এ রাজ্য থেকে সাংসদ করে পাঠানো।

Sunday, January 19, 2014

মিলাদ্দুন্নবী যারা উদযাপন করছে তারা তাদের নবী সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানে না

আজ, ১৪ই জানুয়ারী’১৪, আরবি ক্যালেন্ডারের ১২ই রবিউল, মুহাম্মদের জন্মদিন। বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে দিনটি উদযাপন করছে ‘মিলাদুন্নবী’ হিসেবে। সবচেয়ে বেশী উৎসাহ ও উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে যুব সমাজের মধ্যে। তারা কিন্তু প্রায় কেউই জানে না মুহাম্মদ সম্পর্কে বিশেষ কিছু । ধর্মীয় নেতাদের মুখ থেকে শুনে এবং মুসলিম লেখকদের লেখা পড়ে তাদের ধারণা জন্মেছে মুহাম্মদ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে মুহাম্মদ প্রবর্তিত ইসলাম ধর্ম হলো শান্তি ও সাম্যের ধর্ম, মুহাম্মদ কোরানের বাণী প্রচার করে ইসলাম ধর্মকে বিশ্বের বুকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, মুহাম্মদ নারীকে পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে স্বাধীনতা ও সমানাধিকার প্রদান করেছেন। মুহাম্মদ সম্পর্কে তাদের এ বিশ্বাসগুলো কতটা সত্যি তা তারা যাচাই করে নি। যদি তাদের মুহাম্মদ ও ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকতো তবে তারা ভীষণ হতাশ হতো এবং মিলাদুন্নবী উদযাপন করে অযথা সময়, শ্রম ও অর্থের অপব্যায় করতো না। কারণ মুহাম্মদ সম্পর্কে যা তারা শুনেছে ও জেনেছে তা মোটেই সত্যি নয়, সত্যিটা তার ঠিক বিপরীত। মুহাম্মদ সম্পর্কে অল্প কথায় আলোচনা করা অসম্ভব। তবু তাঁর সম্পর্কে কয়েকটি কথা উল্লেখ করতে চাইছি এ লেখায়। সেটা এ জন্যে যে এর ফলে তাঁর সম্পর্কে অন্তত কিছুটা হলেও সঠিক ধারণা মানুষের মধ্যে তৈরী হবে এবং তিনি সত্যি কেমন মানুষ ছিলো তা জানার আগ্রহ বা কৌতূহল সৃষ্টি হবে। মুহাম্মদ দাবী করেছেন তিনি আল্লাহর দূত, আল্লাহ তাঁকে পাঠিয়েছেন পৃথিবীর বুক থেকে অন্ধকার দূর করে আলো জ্বালবার জন্যে। তিনি সাত আসমান পার হয়ে আল্লাহর সঙ্গে দেখা করেছেন, বেহেস্ত ও দোযখ দেখেছেন। তিনি দাবী করেছেন যে আল্লাহ তাঁকে জানিয়েছেন তার হুকুমে বাতাস বয়, ঝড়-বৃষ্টি হয়, ভূমিকম্প-খরা-বন্যা-সুনামি পভৃতি বিপর্যয়গুলি হয় । সূর্য ও চন্দ্র ঘোরে,এবং পৃথিবী স্থির হয় দাঁড়িয়ে আছে। আর পৃথিবী যাতে কাত হয়ে উল্টে না পড়ে তারজন্যে এর উপর বিভিন্ন স্থানে পাহাড় স্থাপন করেছেন । তিনি দাবী করেছেন যে, আল্লাহর হুকুমে হয় জোয়ার-ভাটা, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ এবং আরও অনেক প্রকার ঘটনা ঘটে ও ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত। এ সমস্ত কথা মুসলমানরা একদা বিশ্বাস করতো, এখনও অধিকাংশ মুসলমান বিশ্বাস করে, কারণ মুহাম্মদ যে আল্লাহর দূত, তিনি কি মিথ্যা বলতে পারেন? বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর উন্নতি ও অগ্রগতির যুগ, আমরা এখন সব জেনে গেছি এই বিষয়গুলি সম্পর্কে। জেনে গেছি যে সব ভুল, একেবারে বিলকুল ভুল। সাত আসমান পার হয়ে (মিরাজ) আল্লাহর সাথে দেখা করার ঘটনাটা তো নেহাতই গল্প, কারণ আসমান(আকাশ) পার হওয়ার প্রশ্নটাই হাস্যকর। কারণ,পার হওয়ার মতো সাতটা তো দূরের কথা, একটা আকাশই তো নেই। না, সত্যিই আকাশের অস্তিত্ব বলতে কিছুই নেই, আমরা যেটাকে আকাশ বলি সেটা আসলে কিছুই নয়, আকাশ কথার প্রকৃত অর্থ হলো একটা মহাশূন্য। আর বিজ্ঞান আমাদের কতদিন আগেই জানিয়ে দিয়েছে যে বাতাস, ঝড়, বৃষ্টি, ভূমিকম্প, সুনামি, বন্যা, খরা এসব তো হয় প্রকৃতির নিয়মে। তাইতো আবহাওয়া অফিস আগামি কাল বা পোরশু আবহাওয়া কেমন থাকবে – শীত বাড়বে না কমবে, জল-ঝড় হবে কী না – তা বলে দিতে পারে, একথা শিশুরাও জেনে গেছে। আল্লাহর হুকুমে ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি হলে আবহাওয়া অফিস নিশ্চয় বলতে পারতো না। পৃথিবী স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে নেই, ঘুরছে সূর্যের চারিদিকে – এ কথা এখন প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও জানে। ৫ম-৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা এখন সকলেই জানে যে আল্লাহর হুকুমে নয়, জোয়ার-ভাটা হয় পৃথিবীর উপর সূর্য ও চন্দ্রের আকর্ষণে। ওরা আরও জানে যে কারও হুকুমে নয়, পুর্ণিমা তিথিতে চাঁদের ছায়ায় ঢাকা পড়লে সূর্যগ্রহণ ও পৃথিবীর ছায়ায় ঢকা পড়লে চন্দ্রগ্রহণ হয়। পৃথিবী কেন কাত হয়ে উল্টে বা ছিটকে পড়ে না তাও ঐ শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের কাছে অজানা নয়, তাই পৃথিবী যাতে কাত হয়ে পড়ে ধ্বংস না হয়ে যায় তারজন্যে আল্লাহ জায়গায় জায়গায় পাহাড় স্থাপন করেছে এমন কথা শুনে আজকের ছেলেমেয়েরা হেসে কুটোকুটি করে, তারা বলে, নিশ্চয় এটা কেউ গুল মেরেছে । ওরা ভুল বলে না, মুহাম্মদ সত্যিই পৃথিবীর মানুষের কাছে নিজে একজন মহাবিজ্ঞানী সেজে অসংখ্য মহাগুল পরিবেশন করে গেছেন। সবচেয়ে বড়ো গুল দিয়েছেন এ কথা বলে যে তাঁকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন পৃথিবীর বুকে আলো জ্বেলে সব অন্ধকার দূর করার জন্যে। কিন্তু আল্লাহ যে কোথায় আছে আজ পর্যন্ত তার অস্তিত্বই টের পাওয়া গেলো না। আর মুহাম্মদ আলো জ্বালবেন কি, তিনি তো দুহাতে যতো আলোর শিখা জ্বলছিল তার প্রায় সবগুলো নিভিয়ে দিয়ে বিশ্ব জুড়ে শুধু অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন। সেই অন্ধকারই আজ বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশী গ্রাস করে রয়েছে মুসলমানদেরই । শুধু অপবিজ্ঞান ও কুসংস্কারের অন্ধকারই নয়, চাপ চাপ নিশ্ছিদ্র গাঢ় অন্ধকার ছড়িয়ে গেছেন বিশ্বজুড়ে মানবাতা, মনুষ্যত্ব, সহিষ্ণুতা, উদারতা প্রভৃতি উচ্চ মানবিক মূল্যবোধগুলির বিরুদ্ধে । ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন নারীর বিরুদ্ধে অবিশ্বাস, উপেক্ষা, অনাস্থা ও ঘৃণার কুৎসিত অন্ধকারও। মুসলমানরা বিশ্বাস করে ও দাবী করে যে ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং মুহাম্মদ হলেন বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তির দূত। কিন্তু আসল ঘটনা অন্য রকম। মুহাম্মদ শান্তির কথা নয়, বলেছেন হিংসার কথা, জেহাদ তথা সশস্ত্র ও সহিংস যুদ্ধের কথা। তিনি বলেছেন যে, ইহুদীরা অভিশপ্ত জাতি ( কোরানঃ ৫/১৩,১৪), মুশরিকরা(অমুসলিমরা) অপবিত্র এবং নরকের জ্বালানি, পৌত্তলিকরা কাফির ও জালেম, ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে না (কোরানঃ ৩/২৮, ১১৮-১২০, ৪/১৪৪, ৯/২৩ ইত্যাদি)। তিনি বলেছেন আল্লাহর নামে - অমুসলিমদের সঙ্গে ততদিন জেহাদ/যুদ্ধ করবে যতদিন না সমগ্র বিশ্বে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হয় (কোরানঃ ৮/৩৯, ৯/২৯,৭৩; ৬৬/৯, ইত্যাদি)। আরও বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্যে জেহাদে অংশ নেওয়া ফরজ (আবশ্যক ) এবং জেহাদ না করলে বেহেস্ত পাওয়া যাবে না । এর সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে কোরানের যে আয়াতগুলির কথা তিনি সদম্ভে ঘোষণা করেছেন তার কয়েকট হলো – ২/২১৬, ৯/১৩,১৪,১৬,১২৩; ৩/১৪২, ৪/৯৫, ৪৭/৪-৬, ৪৮/৫ ইত্যাদি । এই হলো গুটিকয়েক মুহাম্মদের শান্তির সুললিত বাণীর নমুনা। তিনি এভাবে নির্দ্বিধায় ও নির্বিকার ভঙ্গীতে পুনপুনঃ নানা ঢঙে হিংসা ও ঘৃণার কথা বলে গেছেন অমুসলিমদের বিরুদ্ধে, কিন্তু নিজের ঘাড়ে দোষ ও দায়িত্ব নেন নি। চাপিয়ে দিয়েছেন যার কোনো অস্তিত্ব নেই সে আল্লাহর কাঁধে, বলেছেন, আল্লাহ বলেছে। মুহাম্মদ পরম সহিষ্ণু, আকাশের মতো উদার, দয়ার সাগর ও ক্ষমার মূর্ত প্রতীক – এমন বিশ্বাস মুসলমানদের। তারা এ সব বিশ্বাস করে কারণ, তারা জানে না যে বদরের, ওহুদের ও খন্দকের যুদ্ধে মদিনার ইহুদীরা মুহাম্মদের সাথে কোরেশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেন নি বলে তাদের কী ভয়ানক পরিণতি হয়েছিল। মুহাম্মদ সবাইকে মদিনা থেকে নির্বাসিত করেছিলেন নির্মমভাবে সম্পূর্ণ খালি হাতে, এবং তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পত্তি তিনি গ্রাস করে নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বিচারের নামে প্রহসন করে ওঁদের একটি গোষ্ঠীর ৭০০/৮০০ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলেন তাঁদের শিরচ্ছেদ করে । এবং তাঁদের সকল নারী ও শিশুকে বন্দী করে দাসদাসী বানিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছিলেন। তারপর তারা সবাই মিলে ইহুদী নারীদের ভোগ করেছিলেন স্ত্রীর মতো, না হয় বিক্রী করে মোটা অর্থ উপার্জন করেছিলেন। এসব করেছিলেন তিনি আল্লাহর দোহাই দিয়ে। না, ইতিহাসের এই নিষ্ঠুরতম অন্যায় ও অমানবিক বিচার ও হত্যালীলার কথা মোটেই বানানো নয়, এর প্রমাণ কোরানে রয়েছে। ইহুদীদের দোষ ছিলো না, তবু তাঁরা মুহাম্মদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন, বলেছিলেন, ক্ষমা করলে স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় ধন-দৌলত ফেলে খালি হাতে তাঁরা মদিনা ছেড়ে চলে যাবেন। তবুও মুহাম্মদ কর্ণপাত করেন নি তাঁদের করুণ কাকুতি-মিনতিতে। এই হলো মুহাম্মদের উদারতা, সহিষ্ণুতা, দয়াশীলতা ও ক্ষমাশীলতার আসল রূপ! মুসলমানদের দাবী - মুহাম্মদের মতো সৎ ও সত্যবাদী আর কেউ নেই, হওয়া সম্ভবও নয়। কারণ, তিনি যে আল্লাহর দূত, দোস্ত এবং আল্লহ তাঁকে সৃষ্টি করেছেন মহা পবিত্র নূর থেকে। নূর থেকে সৃষ্টি সেই মুহাম্মদ বলেছেন, আল্লাহর বিধান হলো পুরুষরা একসাথে চারটি স্ত্রী রাখতে পারবে। অথচ তিনি নিজে সে বিধান মানেন নি, নিজে স্ত্রী রেখেছিলেন ওনেক বেশী – ১১টা, মতান্তরে ৯টা। আল্লাহ নাকি তাঁকে ইচ্ছা মতো যত খুশী স্ত্রী রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু প্রশ্ন করছে লোকে, তিনি তো পথ প্রদর্শক, তিনি নিয়ম ভাঙবেন কেনো? আল্লাহই বা কেনো তাঁকে বলবে তুমি যত খুশী স্ত্রী রাখতে পারো? আর আল্লাহ, যদি ধরে নিই, তাঁকে বলেছে যত খুশী স্ত্রী রাখতে, তিনই কেনো তা প্রত্যাখান করেন নি? মুহাম্মদ ৬ বছরের শিশু কন্যা আয়েষাকে বিয়ে করেছিলেন। এত কুৎসিত ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। তা দেখে চারিদিকে সবাই ছি ছি শুরু করেছিলো, মুসলমানরাও বিড়ম্বনায় পড়েছিলো, কোথাও মুখ পাচ্ছিলো না। মুহাম্মদ তখন সবার ছি ছি বন্ধ করার জন্যে আল্লাহর দোহাই দেন। বলেন, আল্লাহ আয়েষাকে তাঁর জন্যে সৃষ্টি করেন এবং তার নির্দেশ মতোই বিয়েটা হয়েছে। মুহাম্মদ তাঁর(পালিত) পুত্রবধূকেও বিয়ে করেছিলেন। তাই নিয়ে ঢি ঢি পড়ে গিয়েছিল আরবে। মুহাম্মদ তখন আবার সেই আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলেন যে, স্বয়ং আল্লাহর হুকুমে এ বিয়ে হয়েছে। এ কথা শুনে আয়েষা তীব্র কটাক্ষ করেন মুহাম্মদকে। তিনি বলেন যে, তোমার ইচ্ছাগুলো পূরণ করার জন্যে আল্লাহ সর্বদাই ভীষণ তৎপর! মুহাম্মদ একদিন মারিয়া নাম্নী একজন অতি সুন্দরী, রূপসী ও যুবতী দাসীর সঙ্গে সঙ্গম করেছিলেন তাঁর পত্নী হাফসার ঘরে ও হাফসার বিছানাতেই। হাফসা তখন ঘরে ছিলেন না। সে রাত্রিটা আবার বরাদ্দ ছিলো হাফসার জন্যেই। হাফসা ঘরে ফিরে ওদের সঙ্গমরত অবস্থায় দেখে ফেলে চমকে উঠেছিলেন। নিজের চোখে এত কুৎসিত ঘটনা দেখে শুধু চমকেই ওঠেন নি, ক্ষোভে ফেটেও পড়ে ছিলেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দাম্পত্য কলহ বেধে যায় এবং এক সময় তা চরম আকার নেয়। অবস্থা বেগতিক দেখে মুহাম্মদ সেই পুরানা কৌশলটাই ফের অবলম্বন করেন এবং আল্লাহর দোহাই পাড়েন। বলেন, আল্লাহর আদেশেই তিনি মারিয়ার সঙ্গে সহবাস করেছেন। তাতেও কলহ থামে না দেখে শেষ অস্ত্র তালাকের ভয় দেখান হাফসা ও আয়েষাকে। তালাকের ভয় দেখিয়ে তাঁর স্ত্রীদের মুখ বন্ধ করেছিলেন। তিনি এরূপ বহু কুৎসিত কাজ করেছেন, তারপর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আল্লাহর দোহাই পেড়েছেন। এই হলো তাঁর সততা ও সত্যবাদীতা। আসল ঘটনা হলো তিনি এত মিথ্যাচার করেছেন যা প্রায় অবিশ্বাস্য। এ কাজে তাঁর সমকক্ষ পাওয়া ভার। মুহাম্মদ বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নারীবাদী ব্যক্তিত্ব – এমন দাবী মুসলমানদের। তিনি নারীকে পরাধীনতা থেকে মুক্তি ও পুরুষের সমান অধিকার প্রদান করেছেন এমন দাবী শোনা যায়। কিন্তু আসল ঘটনা হলো ঠিক তার বিপরীত। নারীদের প্রতি আল্লাহর নামে মুহাম্মদ কি কি নির্দেশ প্রদান করে গেছেন তা দেখা যাক – নারী থাকবে গৃহের মধ্যে (কোরান-৩৩/৩৩), নারী সদা স্বামীর যৌনকামনা পূরণে তৎপর থাকবে, কেননা নারী পুরুষের শস্যক্ষেত্র( োরান- ২/২২৩), পুরুষ স্ত্রীকে ধমকাবে, গাল দেবে, প্রহার করবে, ইচ্ছে হলে তালাক দেবে, কারণ পুরুষ হলো নারীর কর্তা (কোরান-৪/৩৪)। নারী গৃহের বাইরে একা একা বেরোবে না, একজন পুরুষ অভিভাবক সঙ্গে নেবে এবং অবশ্যই বোরকা পরবে (কোরান-২৪/৩১, ৩৩/৫৯)। প্রাক ইসলাম যুগে আরবে নারী অনেক স্বাধীন ছিলন এবং তাঁরা অনেক অনেক অধিকার ভোগ করতেন। নারী পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য, এমন কি যুদ্ধেও অংশ নিতে পারতেন। বিয়ের আগে বর নির্বাচন করতে ও পতির দুর্ব্যবহার অসহনীয় হলে পতিকে তালাক দিতেও পারতেন। নারীর সে সকল স্বাধীনতা মুহাম্মদ আল্লহর নামে সম্পূর্ণ হরণ করে নিয়েছেন। মুহাম্মদ একদা বহুলাংশে স্বাধীন নারীকে করেছেন গৃহবন্দী ও বোরকাবন্দী। ঘরের বাইরে বের হলে পুরুষের হেফাজতে যেতে হবে ও বোরকা পরতে হবে – এমন বিধান তো নারীর চরম অপমান, এতো নারীকে দাসী বানানোর সামিল । মুহাম্মদ আরো নানাভাবে নারীকে অপমান করেছেন। তিনি বলেছেন - যদি কোনো ব্যক্তি সঙ্গম করার ইচ্ছায় স্ত্রীকে আহ্বান করে সে যেন তৎক্ষণাৎ উপস্থিত হয় যদিও সে উনানের ওপর থাকে (মুসলিম শরীফ)। তিনি বলেছেন - ‘The woman who dies with whom the husband is satisfied will go to paradise’। আরো বলেছেন, ‘আমি যদি কোন ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির সামনে সিজদা করার নির্দেশ দান করতাম তবে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করার জন্যে’ (তিরমিযি)। ‘আমি আমার অনুপস্থিতিতে পুরুষের জন্যে মেয়েদের চেয়ে অধিকতর ফিতনা ও ক্ষতিকর কিছু রেখে যায় নি’(বোখারি ও মুসলিম)। ‘নারীর নেতৃত্ব মানবে যে জাতি তারা ধ্বংস হবে’ (মুসলিম হাদিস)। নারীর বিরুদ্ধে এরূপ অসংখ্য অপমানজনক উক্তি করেছেন মুহাম্মদ। অথচ মুহাম্মদ নারীজাতির মুক্তিদাতা, সমানাধিকার দাতা, সম্মান দাতা, রক্ষাকর্তা এরূপ কত কথাই না শোনা যায়। নারী নাকি পিতামাতার সম্পত্তির ভাগ পেতো না, মুহাম্মদ তাঁদের সে অধিকার দেন। এটা সত্য হলে খাদিজা কিভাবে বিশাল ধন-সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন ? মুহাম্মদ বরং নারীর অংশ পুরুষের তুলনায় অর্ধেকে নামিয়ে দেন। নারীকে সবচেয়ে বেশী অপমান করেছেন মুহাম্মদ ‘গণিমতে’র মাল বানিয়ে। বলেছেন যুদ্ধবন্দী নারী হলো গণিমতের মাল, তাকে স্ত্রীর মতো ভোগ করা বৈধ। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর নামে পরনারীকে ধর্ষণ করা মুসলমানদের জন্যে বৈধ বলে বিধান তৈরী করেন। এত কুৎসিত আইন আগে ছিলো কি না জানা নেই। তিনি নিজেও ঐ নারীদের ভোগ করেছেন অবলীলায়। মদিনা থেকে সব শেষে ইহুদীদের যে গোষ্ঠীর সকল পুরুষদের মুন্ডুচ্ছেদ করেছিলেন তাঁদের সেনাপতির যুবতী ও রূপসী স্ত্রী রায়হানাকে সেদিনই তিনি বলপূর্বক ভোগ করেন। অনুরূপ ঘটনা ঘটিয়েছিলেন খাইবারেও। অতর্কিতে খায়বার আক্রমণ করে এবং সেখানকার ইহুদীদের হত্যা করে তাদেরই নিহত সেনাপতি কেনানার পরম সুন্দরী স্ত্রী সফিয়াকে সে রাত্রেই একই কায়দায় ভোগ করেন। এই হচ্ছে নারীর মুক্তিদাতা, সম্মান দাতা, রক্ষাকর্তা মুহাম্মদের আসল পরিচয়। গোটা বিশ্বে আজ মহাসমারোহে মুহাম্মদের জন্মদিন পালিত হচ্ছে। উদ্যোগে, আয়োজনে ও পরিচালনায় মুখ্য ভূমিকায় রয়েছে মুসলিম যুবরাই । ওরা যদি জানতো মুহাম্মদ আসলে কি রকম ছিলেন, তাহলে নিশ্চয় তারা এমনটা করতো না। তাই তাদের উদ্দেশ্যেই এ লেখাটা। নিবন্ধটি লিখি মুহাম্মদের জন্মদিনেই (১৪/০১/১৪), যেদিন না জেনে না বুঝে মুসলমানরা তাঁর জন্মদিন উদযাপন করছিলেন সেদিন। মুহাম্মদ সম্পর্কে সত্য উদঘাটন করার সেটাইতো সবচেয়ে ভালো দিন। ১৫/০১/১৪ তারিখ নিবন্ধটি আমার ব্লগে পোষ্ট করি, তারপর সামান্য কিছু পরিমার্জন করে আবার আজ(১৮/০১/১৪) পোষ্ট করা হলো। যাঁরা সমর্থন করে তাঁরা শেয়ার করলে খুশী হবো। at January 19, 2014 Email ThisBlogThis!Share to TwitterShare to FacebookShare to Pinterest

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...