Sunday, December 2, 2012

খালেদার ভারত সফরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যেকার সম্পর্কের উন্নতি হবেনা


                                               

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের বিরোধী দলনেতা তথা বিএনপির সভানেত্রী চিন ঘুরে আসলেন ।সেদেশে গিয়েছিলেন চিনের সরকারের  আমন্ত্রণে। চিন ঘুরে এসেই ভারত সরকারের আমন্ত্রণে তাঁর ভারত সফর ইদের (ইদ-উল-আজহা) পরের  দিন থেকেস্বভাবতই খালেদা জিয়ার ভারত সফর নিয়ে দুদেশেই নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । চিনে খালেদা জিয়ার সরকারী নিমন্ত্রণে সফর খুব স্বাভাবিক ব্যপার ,তা নিয়ে কিছু কৌতূহল  থাকতে পারে ,কিন্তু কাউকে অবাক করেনা । কারণ খালেদা জিয়া ও তাঁর দল চিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু । অপরদিকে চীনের ভারত বিরোধী অবস্থান দিনের আলোর চেয়েও স্পষ্ট । তথাপি চিনে সফরের পরপরই খালেদাকে ভারত সফরে কেন আমন্ত্রণ করা হল তা আমাদের বোধগম্যের অতীত
ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্ব ভারতের কাছে সর্বাধিক । কারণ ভারতের তিনটি রাজ্য (পশ্চিম বঙ্গ ,অসম ও ত্রিপুরা) জুড়ে রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ বিশাল সিমান্ত অঞ্চল । অন্য দুটি প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ও চীনের ভারত বিরোধী অবস্থানের কথা সমগ্র বিশ্বে সুবিদিত । এই দুটি দেশ তাদের ভারত বিরোধী কার্যকলাপে বাংলাদেশকে যে ব্যবহার করে তাও সকলের জানাসুতরাং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ করে গড়ে তোলা যে ভীষণ প্রয়োজন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। চিন যাতে বাংলাদেশকে ও বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্যে যদি ভারত সরকার খলেদা জিয়াকে ভারত সফরে ডেকে থাকেন তাহলে কিছু বলার থাকেনা। কিন্তু প্রশ্ন সেখানে নয়, প্রশ্নটা খালেদা জিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে । খালেদা ইতিমধ্যেই আমাদের প্রধান মন্ত্রী ও বিদেশ মন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন যে ভারত বিরোধী কার্যকলাপের জন্য বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করতে দেবেন না তিনি যদি ক্ষমতায় ফিরে আসেন। তিনি আমাদেরকে অতিতের কথা ভুলে সামনের দিকে তাকাতে অনুরধ করেছেন ।   খালেদার কথা কতটা বিশ্বাসযোগ্য সে কথায় পরে আসছি , কিন্তু তিনি এই আশ্বাস বাণী উচ্চারণ করে এটা  স্বীকার করলেন যে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে  বাংলাদশের মাটিকে ভারত বিরোধী কার্যকলাপে ব্যবহার করার যে অভিযোগ এতদিন ভারত করে এসেছে তা একশ শতাংশ সত্যি এবার আসা যাক খালেদা কততা বিশ্বাসযোগ্য সে প্রশ্নে ।  
খালেদা জিয়ার আশ্বাসে ভারত সরকারকে খুবই আপ্লুত ও আহ্লাদিত দেখাচ্ছে ।এটা যদি  ভারত সরকারের কূটনৈতিক শিষ্টাচার হয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা, কিন্তু যদি তাঁর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করা হয় তা  হবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার সামিল ।কারণ এরফলে আওয়ামি লিগ ও আওয়ামি লিগের সরকারের সঙ্গে যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও  বিশ্বাসের সম্পর্ক বর্তমানে  আছে তা ক্ষতিগ্রস্থ হবে যা কখনও সমীচীন নয় । আমরা একথা ভুলতে পারিনা যে, আওয়ামি লিগ হচ্ছে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ অপরদিকে  পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক মোটেই সুসম্পর্ক  নয় তা বলা বাহুল্য  আর চীন ও  ভারতের মধ্যে  সম্পর্ক স্থাপনের প্রশ্নে আওয়ামি লিগের প্রবনতা সর্বদা ভারতের অনুকূলে তাতে কোন অস্পষ্টতা নেই ।  সেজন্যই কি পাকিস্তান, কি চিন কোন দেশই আওয়ামি লিগের সরকারকে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে  পারেনি ।অপরদিকে অতিতেও খালেদা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা পালন করেননি  এবার তিনি তাঁর কথা রাখবেন এমনটা ভরসা করার কোনও কারণ ঘটেনি । খালেদা জিয়া ক্ষমতায় ফিরে এসে তিনি যদি অতিতের মতই কথার খেলাপ করেন, যা করার আশঙ্কাই প্রবল , তাহলে তা কীরূপ ভয়ংকর হতে পারে তা বুঝবার জন্য অতীতের দিকে চোখ বুলানো প্রয়োজন ।
                                                                                                 পৃ-২
১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র রূপে আত্মপ্রকাশের পর ১৯৭২ সালে যে সংবিধান সে দেশ গ্রহণ করেছিল সেখানে চারটি লক্ষ্য ঘোষিত হয়েছিল ।ধর্মনিরপেক্ষতা ,গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও জাতিয়তাবাদ ।বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সংবিধানের অপমৃতু ঘটানো হয়েছিল । তারপর সামরিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন ।গড়ে তোলেন বিএনপি(Bangladesh National Party—BNP) ১৯৭৮ সালে সংবিধান সংশোধন করে সংবিধান থেকে ধর্ম নিরপেক্ষতা শব্দ ও নীতিটি মুছে দেন ।সংবিধানের মুল ভিত্তি করেন  ইসলামকে ।ঘোষণা দেওয়া হয় ,আল্লার প্রতি ইমান হবে সব কাজের ভিত্তি ।বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করে একটি ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী কাজ করেছিলেন জিয়াঊর রহমান সেই নিষেধাঙ্গা  তুলে দিয়ে ইসলামী রাজনীতিকে আইনসিদ্ধ করেন । মুক্তি যুদ্ধের শত্রু  ও পাকিস্তানপন্থী মুসলিম মৌলবাদী ও জঙ্গি সং-  গঠনসমূহকে  ও ধর্মগুরুদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন দেন ।সেটা ছিল ৫ম সংশোধনী ।জেনেরাল এরশাদ ১৯৮৬ সালে  ৭ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্ধকারের দিকে আর  এক ধাপ টেনে নিয়ে যান ।তিনি ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম ঘোষণা করেন ।এই দুটি কুখ্যাত সংবিধান সংশোধনী সে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে সম্পূর্ণ হত্যা করে এবং হত্যা করে মুক্তি যুদ্ধের নীতি ,আদর্শ ও চেতনাকে । হত্যা করে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত গনতন্ত্র ও বাঙালি জাতিয়তাবধকেও । বাঙালি জাতির পরিচয় মুছে দিয়ে ঘোষণা করলো বাংলাদেশের মানুষদের জাত একটাই ,তাহলো মুসলমান জাত ,তারা বাংলাদেশি মুসলমান । পূর্ব পাকিস্তানের মতই আবার শুরু হল   বাংলাদেশে ইসলামিকরণের কাজ। এই কাজের লক্ষ্য হল বাংলাদেশকে হিন্দু ,বৌদ্ধ ও খৃষ্টান মুক্ত করা ।রাষ্ট্রীয় মদতে মুসলিম মৌলবাদীরা ঝাঁপিয়ে পড়ল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর ।বিশেষ করে শুরু হল ব্যাপক সন্ত্রাস- লুটপাট ,হত্যা ,নারীধর্ষণ। আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় ফিরে এলে সংখ্যালঘুদের ওপর এই আক্রমণ অনেকটাই কমে কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেই আক্রমণ আবার বৃদ্ধি পায় । এরফলে ক্রমাগত হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে । ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে হিন্দু ও মুসলিম জনসংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭৬.৯% এবং ২২% । ২০১১ সালে সেটা এখন ৯০.৪% এবং ০৮.৫% । ৬০ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা ১৩.৫% হ্রাস পেয়েছে আর মুসলিম জনসংখ্যা ঠিক সেই অনুপাতেই বৃদ্ধি পেয়েছে।এর থেকে অনুমান করা সহজ যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর কি ভয়ানক আক্রমন হয় বাংলাদেশে ।আক্রমণের ছবিটা কত ভয়াবহ তার বর্ণনা ক তথ্য পাওয়া যায় সে দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ ও সাহসী বুদ্ধিজীবীদের লেখায় ।মানবাধিকার কর্মী সালাম আজাদ লিখেছেন, বাংলাদেশের হিন্দুদের জন্য এখন তিনটি পথ খোলা ।এক. ধর্ম বদল করে হিন্দু হয়ে যাওয়া –যা ধর্মপ্রাণ হিন্দুর কাছে মৃত্যুর সমতুল্য ।দুই . আত্মহত্যা করা । তিন. দেশত্যাগ করে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত চলে যাওয়া ।(ভাঙা মঠ ,পৃ-৭৯)।   এইরূপ পরিস্থিতিতে কি হারে হিন্দুরা স্বদেশ ত্যাগ করে চোখের জলকে কেবল সম্বল করে ভারতে পাড়ি দিয়েছেন তার তথ্য রয়েছে সেই বইয়ে ।তিনি জানিয়েছেন ,প্রতিদিন ৪৭৫ জন এবং প্রতি বছর ১৭৩৩৭৫ জন (এক লক্ষ তিয়াত্তর হাজার তিন শত পঁচাত্তর জন হিন্দু চিরদিনের জন্য বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে । (পৃ-৪৯)।  এই বইটি কলকাতায় ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় যখন বাংলাদেশে সরকার ছিল বিএনপির এবং প্রধান মন্ত্রী ছিলেন খালেদা জিয়া । এই একই কথা বলেছেন লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও সাংবাদিক গাফফার চৌধুরী ।ওই বছরেই তিনি একটা প্রবন্ধে তিনি লেখেন ,২০০১ সালের অক্টোবর নির্বাচনের পর জোট সরকার সেনা ,BDR   দলীয় ক্যাডারদের সাহায্যে সংখ্যালঘুদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন  চালায় তাতে তাদের মধ্যে দেশত্যাগের আবার ব্যাপক হিড়িক দেখা দেয়। তিনি আরও লেখেন ,আমার কোনও সন্দেহ নেই ,বিএনপি ও জামায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের বর্তমান জোট সরকার-এর অঘোষিত নীতি হচ্ছে দেশটাকে হিন্দু ,বৌদ্ধ ,খৃষ্টান ও আদিবাসী শুন্য করা ।( দ্রঃ- দৈনিক স্টেটসম্যান ,১৮.১২.২০০৪)।
বঙ্গবন্ধু মজিবুর রহমান কট্টর মৌলবাদী মুসলিম ধর্মগুরু এবং  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শ্ত্রু গোলাম আযমের নাগরিকত্ব খারিজ করেদিয়েছিলেন । মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর গোলাম আযম পাকিস্তানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন আযম ভারতের মাটিতেও পরিচিত একটি কুখ্যাত নাম হিসাবে ।বিগত শতাব্দীর নব্বই দশকে স্লোগান উথেছিল- আদবানি-আযম ভাই ভাই/এক দড়িতে ফাঁসী চাই ।  সেই আযমকে জিয়াউর রহমান ফিরিয়ে নিয়ে এসে তার নাগরকত্ব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । তারপর  তার পুত্র আলম আল আযমিকে সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে (ব্রিগেডিয়ার) পদে নিয়োগ দেওয়া হইয়েছিলএইভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটীতে মুক্তিযুদ্ধের একজন প্রধান শত্রুকে বিএনপি পুরস্কৃত করেন ।মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের পুরস্কৃত করার কাজ খালেদা জিয়াও সমানতালে এগিয়ে নিয়ে গেছেন যখনই ক্ষমতায় এসেছেন।তিনি তো ওদের  জোটসঙ্গী করে তাঁর রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য করে নিয়েছেন ।বিএনপির চার দলীয় জোটের গুরুত্বপুরনো সদস্য হল জামাত-ই-ইসলাম ও ইসলামি ঐক্যজোট । খালেদা জিয়ার এর আগের পাঁচ বছরের (২০০১-২০০৬) শাসনকালে মুজিব হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে মামলায় একটা শুনানিও হয়নি ।এই সময়ে ৭০ হাজার মুসলিম জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের জেল থেকে ছেড়ে দেন । ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীতে ৩৫% নিয়গ দিয়েছিলেন মুসলিম জঙ্গি সংগঠনের লোকজনদের তথা সন্ত্রাসীদের । ফাঁসীর সাজা প্রাপ্ত মুস্লিম জঙ্গি সংগঠনের দুই নেতা ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী শায়খ রহমান ও বাংলাভাইকে মীরপুরের একতি বাড়ীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি করে রেখেছিলেন ।শায়খ রহমান ও বাংলাভাইয়েরা ব্যপক খুনখারাপি করছে বাংলাদেশে কোরানের শাসন বলবৎ করার জন্য তখন খলেদার সরকার বলেছিল বাংলাভাই বলে কেউ নেই , ওসব বিরোধীদের আবিষ্কার ।খালেদার সরকার এই সময়েই কওমি মাদ্রাসার সর্বচ্চ ডিগ্রি ‘দাওরায় হাদিস’কে MA-র সমতুল্য করেছিলেন । ‘হারকাতুল-জেহাদ-ই-ইসলাম’, ‘জামায়াতুল-মুজাহিদিন’,’শাহাদাত-আল-হিকমা’ , ‘বাংলাদেশ জাগ্রত মুশলিম জনতা’ প্রভৃতি ভয়ংর সনত্রাসী সংগঠনগুলি এই সময়ে ব্যাপক শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছিল । এরাই ঘোষণা দিয়েছিল আল্লার ভুখন্ডে মুসলমান ছাড়া কেউ বাস করতে পারবেনা আর আল্লার ভুখন্ডে আল্লার বিধান ব্যতীত মানুষের বিধান চোলোবেনাএরাই খালেদার প্রচ্ছন্ন মদতে ২০০৫ সালে ১৭ই আগস্ট বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় একই দিনে ৩৭৬ জায়গায় সিরিজ বোমা ফাটিয়ে ছিল, দিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল এবার তারা কোরানের শাসন কায়েম করার জন্য ‘direct action’ শুরু করে দিল ,ক্ষমতার ভাগ নয় চাই পূর্ণ ক্ষমতা । খালেদা সরকারই ১৯৯৪ সালে নারীবাদী লেখক তসলিমাকে বাংলাদেশ থেকে চিরদিনের জন্য নির্বাসিত করেছিল ,তাঁর অপরাধ ছিল তিনি ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় বাঙ্গালদেশে ব্যপক হিন্দু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে একটা উপন্যাস (লজ্জা) লিখেছিলেন ।খালেদা জিয়ার এরুপ কাজের কথা বলে শেষ করা যাবেনা । তিনি এখন বিরোধী দলনেত্রী হিসাবে প্রধান যে কাজটি করছেন তাহল যুদ্ধপরাধীদের বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে তা যে কোন উপায়ে বানচাল করা।
তাঁর আমলে বাংলাদেশ বরাবরই শুধু মুসলিম মৌলবাদী সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলোই নয়,ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিও নিরাপদ আশ্রয় ও প্রশ্রয় পেয়েছে । উলফার জন্য দশ ট্রাক আস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে ধরা পড়েছিল তাঁর বিগত সরকারে আমলে। তিনি ক্ষমতায় থাকুন আর না থাকুন তাঁর দল এবং মুসলিম মৌলবাদী দলগুলির  অবস্থান হল সর্বদা ভারত বিরোধী । এটাই তাদের বিদেশনীতি । এই বিদেশনীতি তাদের রাজনৈতিক ও ধরমীয় দর্শন থেকে উদ্ভুত ।ভারতকে সর্বদা শ্ত্রু দেশ হিসাবে দেখে এসেছে সেই দর্শন থেকেই ।বাংলাদেশের  মুক্তিযুদ্ধে  সব রকমভাবে সাহায্য করার পর তাদের ভারতবিরোধিতা অনেকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে ।বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে মেরুকরণ স্পষ্ট –একদল ভারতকে বন্ধুদেশ ও অন্যদল শত্রুদেশ ভাবে । আওয়ামি লিগ ও অন্যান্য ধর্মনরপেক্ষ দল এবং মানুষজন ভাবে বন্ধুদেশ, এবং বিএনপি ও তাদের সঙ্গি-সাথিরা ভাবে শত্রুদেশ ।
খালেদা ভারতে এসে বলেছেন তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসলে বাংলাদেশের মাটিকে ভারতবিরোধী কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া আর হবেনা ,অতীতে্ যা হবার হয়ে গেছে ।কিন্তু তাঁর এই মুখের কথায় বিশ্বাস করার কোনও কারণ ঘটেনি । তাঁর দল অতীতের মানবতাবরধী, ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধি ও গণতন্ত্রবরোধী কাজের জন্য কখনো দুঃখ প্রকাশ করেনি এবং দলীয় রাজনৈতিক ও মতাদর্শগতভাবে অবস্থানের কোনো পরিবর্তনও করেনি । সুতরাং তিনি ক্ষমতায় এলে যে তাঁর কথার খেলাপ করবেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই । 
খালেদার ভারত সফরে তাই ভারতের কোনো লাভ হবেনা কারণ খালেদা ক্ষমতায় এলে ভারয় ও বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি হবেনা ,বরং আরও খারাপ হবে ।তবে এই সফর থেকে অবশ্যই লাভবান হবেন খালেদা ।তিনি দেশে ফিরে গিয়ে এ প্রচার নিশ্চয় করবেন না যে ,আমাকে ভোট দিন আমি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করবো । তিনি যে প্রচার করবেন তাহল ,এই দেখ ভারতও বুঝেছে যে আওয়াম লিগের জনসমর্থন নেই এবং সামনের নির্বাচনে আর তারা ক্ষমতায় আস্তে পারবেনা , তাই তারা আমাকে ভারত সফরে নিমন্ত্রণ করেছিল । বলা বাহুল্য যে ,এই প্রচার  আগামী বছরের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে অনেক সুবিধা এনে দিবে। অপরদিকে নানা কারণে এবং বাস্তবসম্মত কারণেই হাসিনার সরকার ও দলের জনসমর্থন ক্রম হ্রাসমান , এই সময়ে খালেদাকে ভারত সরকারের নিমন্ত্রণের ঘটনা হাসিনার প্রতি জনসমর্থন হ্রাসের প্রবণতাকে আরও বাড়বে । বাংলাদেশের মানুষ কাকে ক্ষমতায় নিয়ে সেটা তাঁদের নিজস্ব বিষয় । কিন্তু অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার নিরিখে একথা নিঃশংসয়ে বলা যায় যে আমরা কখনোই খালেদার ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ সুগম করতে পারিনা । কারণ তিনি ক্ষমতায় ফিরলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে উন্নতি হবেনা তা সংশয়াতীত ।

KARBALA: Truth and Lies

  KARBALA : Truth and Lies           GIASUDDIN                 Translated by SRIJIB BISWAS        ...